দোল উৎসবের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে মায়াপুর ইস্কন মন্দিরে
চৈতন্যদেবের ৫৩৭ তম আবির্ভাব উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে
গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দোল পূর্ণিমার শুভ সূচনা হল নদিয়ার মায়াপুর ইস্কন মন্দিরে। শ্রী শ্রী মহাপ্রভু চৈতন্য দেবের ৫৩৭ তম জন্মতিথি উপলক্ষ্যে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এক মাস ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ইস্কনের প্রধান কেন্দ্র মায়াপুরে। আগামী ৭ই মার্চ রয়েছে দোল পূর্ণিমা। আর এই দিন পর্যন্তই চলবে এই অনুষ্ঠান। দোল পূর্ণিমার আগে থেকেই বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ থেকে ৫ হাজার বিদেশী ভক্ত এবং প্রায় লক্ষাধিক ভারতীয় ভক্তরা এসেছেন এই গৌরপূর্ণিমা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
গতবছর মায়াপুর ইস্কন মন্দিরের রাধাষ্টমীর অনুষ্ঠানও এক আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছিল। অধিবাসের মধ্যে দিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণ শুভ সূচনা হয় রাধাষ্টমীর অনুষ্ঠানের। ভোরে হিন্দু শাস্ত্রীয় রীতিনীতি মেনে ভগবান রাধা কৃষ্ণের মঙ্গলারতি করেন মন্দিরের ভক্তবৃন্দরা। এছাড়াও নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সারাদিনব্যাপী পালিত হয় রাধাষ্টমীর অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার দর্শকবৃন্দের সমাগম ঘটেছে মায়াপুর ইস্কন মন্দির প্রাঙ্গনে। দূর দুরান্ত থেকে আগত ভক্তবৃন্দদের মধ্যে বিনামূল্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করার ব্যবস্থা রয়েছে ইস্কন মন্দিরের পক্ষ থেকে। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতিতে রাধাষ্টমীর অনুষ্ঠান দেখতে পারেননি দর্শনার্থীরা। ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমতম দিনে রাধার জন্ম। তাই দিনটি যথাযথ শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করা হয়। বৃষভাণুনন্দিনী রাধাকে লক্ষ্মীর অবতার ধরা হয়। কৃষ্ণপ্রিয়া রাধার জন্মস্থান বর্ষানা। সেখানে দিনটি বিশেষ ভাবে উদযাপন করা হয়। এছাড়াও সারা ভারতে, বিশেষত বৈষ্ণব-ভাবাপন্ন অঞ্চলগুলিতে বৃন্দাবনেশ্বরী রাধার জন্মদিন বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের লীলাসহচরী, শ্রীকৃষ্ণের গোপিনীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাধা। তাই রাধাকে আলাদা দৃষ্টিতে দেখা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের শেষে নদিয়ার মায়াপুরের ইস্কনের মন্দিরে গীতা পাঠের অভিনব আয়োজন করা হয়। ৫ হাজার জন একসঙ্গে বসে গীতাপাঠ করেন। মন্দিরের গোশালার পিছনে যে ফাঁকা ময়দান রয়েছে, সেখানেই ভক্তদের জন্য নির্ধারিত আসন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তৈরি করা হয়েছে মোট চারটি মঞ্চ। উল্লেখ্য, গতবছর মায়াপুর ইস্কন মন্দির ৫০ বছরে পদার্পণ করে। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মহা-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের মধ্যেই দোল পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপহার দেওয়া গৌর নিতাই বিগ্রহের মহা-অভিষেক সম্পন্ন করা হয়।
ইস্কন মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রী শ্রী মহাপ্রভু চৈতন্য দেবের ৫৩৭ তম জন্মতিথি উপলক্ষ্যে এক মাস ব্যাপী বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখ্য বৈষ্ণব সম্মেলন, নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা, বিশ্ব শান্তি যজ্ঞ, নৌকা বিহার, শোভাযাত্রা, বিভিন্ন ভাষায় ভাগবত পাঠ, একাধিক সেমিনার, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভক্তবৃন্দের দ্বারা বিভিন্ন ভাষায় ভজন কীর্তন, বিভিন্ন নাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এককথায় বলা যায়, আলোকমালায় সেজে ওঠে মন্দির চত্বর। সব মিলিয়ে রঙিন এক উৎসব চৈতন্যধামে আর তার সাথেই সুসজ্জিত কারুকার্য।
মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরটি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় ভবন হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। এই মন্দিরটি ২০২৪ সালে খোলা হবে। এটি পশ্চিমবঙ্গের বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়ামের মন্দির। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ কৃষ্ণ কনসায়সনেস (ISKCON)-এর সদর দফতরও হতে চলেছে মায়াপুরের এই মন্দিরটি। বিশ্বের বৃহত্তম গম্বুজ রয়েছে এই মন্দিরে। মন্দিরটি পুরোপুরি তৈরি হলে তা তাজমহল এবং ভ্যাটিকানের সেন্ট পলের ক্যাথেড্রালের থেকেও বড়ো হবে। করোনা মহামারীর কারণে এই মন্দির নির্মাণে দুই বছরের বিলম্ব হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কম্বোডিয়ার ৪০০ একর বড় আঙ্কোর ওয়াট মন্দির কমপ্লেক্সকেও হার মানাবে। এই বৃহত্তম মন্দিরকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে।