আবারও দল পরিবর্তন! পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজেপির দুই বিধায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে
রাজ্য রাজনীতিতে দলবদলের ট্রেন্ড নতুন কিছু নয়
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে পুনরায় পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতা ধরে রাখেন। বিজেপি হাজার চেষ্টা করেও বাংলা দখল করতে ব্যর্থ হয়। আর তারপর থেকেই দলবদল শুরু হয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেসব নেতা মন্ত্রীরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির হাত শক্ত করতে চেয়েছিলেন তারা পুনরায় তৃণমূলে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। বিজেপি ছাড়ার পর প্রথমে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই বৈঠক করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তারপর কিছুদিন পরেই তৃণমূল শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি তৃণমূলের একজন বিধায়ক।
গতকাল বাবুঘাটে বিজেপির গঙ্গা আরতি নিয়ে সরগরম ছিল রাজ্য-রাজনীতি। ঠিক তার থেকে কিছুটা দূরে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে বিজেপির দুই বিধায়কের বৈঠক নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
সূত্রের খবর, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরেই বৈঠক চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক তারকা বিধায়ক ও উত্তরবঙ্গের অপর বিধায়কের। দলবদল করলে তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে কী পদ পেতে পারেন, তাঁদের ঘাসফুল শিবিরে ঠিক কী ভূমিকা হতে পারে, সেই নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের পক্ষ থেকে ডিসেম্বর মাস থেকে বিজেপি বিধায়কদের দলবদলের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। সঠিক সময়ে অনেকেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করবেন বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। তারপরেই নতুন বছরের শুরুতে দুই বিধায়কের সাক্ষাৎকারকে ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য-রাজনীতির অন্দরে। মনে করা হচ্ছে, দুই বিজেপি বিধায়কের তৃণমূল যোগদান এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
ডায়মন্ডহারবার সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিভিন্ন সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার হুমকি দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস দরজা খুললে উঠে যাবে বিজেপি দলটাই। এর পাশাপাশি তিনি শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে দাঁড়িয়ে দলীয় কর্মীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, দরজা কী খুলব? যার উত্তরে সমস্বরে হ্যাঁ পেয়ে দলীয় কর্মীদের আশ্বস্ত করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন,
‘দরজা খুলব ঠিক সময়ে’
সামনেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর তার আগে বঙ্গ বিজেপিতে বিশাল ভাঙনের সম্ভাবনা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জেলায় জেলায় আবাস দুর্নীতি, নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে তৃণমূলের একাংশের লেজেগোবরে অবস্থা। সবে মাথা তুলতে শুরু করেছে বিজেপি। আর তখনই বড় ধাক্কার মুখে গেরুয়া শিবির।এদিকে তাঁদের তৃণমূলের অফিসে আসার খবর সামনে আসতেই তীব্র শোরগোল পড়ে যায় দুই শিবিরেই।
উত্তরবঙ্গে বিজেপির ভিত বরাবরই মজবুত। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই ভিতেই এবার চিড় ধরিয়ে দিতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল। অন্যদিকে বিজেপি শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, তৃণমূলের একাধিক হেভিওয়েট নাকি যোগাযোগ রাখছেন তাঁদের সঙ্গে। তার সংখ্যাও জানানো হয়েছিল। কিন্তু গোটা ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই বিজেপির অনেক নেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। অনেকের মতে, আসলে পঞ্চায়েতের আগে বিজেপির মনোবল ভাঙতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে ঘাসফুল শিবির।