একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে রেখেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই নির্বাচনে বাংলায় সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ সহ বিজেপির উচ্চপদস্থ নেতারা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলকে হারাতে ব্যর্থ হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা হাতে বিজেপির বিজয়রথ থামিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর দিয়েই মোদী বিরোধী মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই উঠে এসেছিলেন। রাজ্যের শাসক দল ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে “ভারত এবার দিদিকে চায়” এই স্লোগান দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস দেশজুড়ে রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু করেছিল। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের মাটি শক্ত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে।
২০২৪-এ দেশে লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলিও নিজেদের শক্তিশালী করে নিয়েছে। একুশে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে বড়ো জয় পেয়েছিলেন। এত বড়ো জয় তাও বিজেপির বিরুদ্ধে এর আগে কোনও আঞ্চলিক দল পায়নি।
ইতিমধ্যে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই নয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্যতা নেই। অবশ্যই তাঁর যোগ্যতা রয়েছে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে তিনি কতটা টানতে পারবেন সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। এখনও সেটা দেখা যাচ্ছে না। তাঁকে বিজেপির দেশ বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্বে থাকতে হবে।”
তাঁর এই মন্তব্যে দেশের রাজনীতি প্রায় তোলপাড়। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আঞ্চলিক শক্তির গুরুত্বের কথা। তিনি তামিলনাড়ুর ডিএমকে, তেলেঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল টি আর এস, জেডিইউ, সমাজবাদী পার্টি এবং তার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, ‘বিজেপি যেভাবে নিজেকে বিরাট শক্তিধর হিসেবে দেখায় সেটা একটা দিক। কিন্তু বিজেপির দুর্বলতাও বিস্তর। সমস্ত দল যদি একসঙ্গে লড়াই করতে পারে তাহলে ২০২৪ সালে বিজেপিকে রুখে দেওয়া সম্ভব।’ তবে কংগ্রেস যেভাবে দুর্বল হয়েছে তাতে তাদের উপর মানুষ কতটা আস্থা রাখবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, আগামী বছর ১৫ই অগস্ট লালকেল্লা থেকে দেখতে পাওয়া যাবে ৫ ফুটের মহিলা হাওয়াই চটি আর তাঁতের শাড়ি পরে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন। গত বছরের একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কোন অঙ্কে, কীভাবে আমি বলব না। তবে ২০২৪–এ দিল্লিতে বিজেপি থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না।’ এবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের এমন মন্তব্যে বিজেপির অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মন্তব্য নিয়ে যখন গোটা দেশে চর্চা শুরু হয়েছে তখন অর্থনীতিবিদের পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘তাঁর উপদেশ আমাদের কাছে আদেশ।’’ রাজ্যের বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অমর্ত্যের মন্তব্যকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেনি।
এই প্রসঙ্গে রবিবার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদ খালি নেই।” তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালে বিজেপিই ক্ষমতায় ফিরবে। কিন্তু অমর্ত্যবাবুর এই মন্তব্যে যথেষ্ট চাপে পড়ে গেছে বিজেপি।