উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে প্রায়শই কম্পণ অনুভূত হয়
ভয়ানক ভূমিকম্পের ফলে তুরস্ক আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। হাহাকার অবস্থা সিরিয়াতেও। মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। আহতের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাচ্ছে না। ধ্বংসস্তূপের ভিতর দিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষকে উদ্ধার করা হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে একটি প্রশ্ন উঠে আসছে, সেটি হল তুরস্ক থেকে বহু দূরে অবস্থিত ভারত কী আদেও নিরাপদ?
ডাচ গবেষক ফ্র্যাঙ্ক হুগারবিটস জানিয়েছেন, তুরস্কের মতোই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা ভূমিকম্পের কবলে পড়তে পারে। সম্প্রতি দিল্লি সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে একাধিকবার কম্পণ অনুভূত হয়েছে। তবে সেই কম্পণের মাত্রা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু বারবার ভূমিকম্পের কম্পণে কেঁপে ওঠায় স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তার আশঙ্কা থাকছে। এ বিষয়ে ২০২২ সালে ডিসেম্বরে লোকসভায় বিষয়টি তোলা হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন ছিল যে, ভারতের কোন কোন এলাকায় ভূমিকম্পের জেরে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর জবাবি ভাষণে জানানো হয়েছিল যে, হিমালয়ের পাদদেশ সংলগ্ন এলাকাগুলি বিশ্বের সবচেয়ে ভূকম্পণ কবলিত এলাকা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই অঞ্চলটি প্রায় ২৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই এলাকাগুলিতে অতীতে মাঝারি থেকে গুরুতর ভূমিকম্প হয়েছে। বেশ কয়েকবার অত্যন্ত গুরুতর ভূমিকম্প হয়েছে। সেই ভাষণে এটাও বলা হয়েছে যে, পরিবেশগত কারণে এই এলাকাতে ফের বড়োসড়ো ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী ভূমিকম্প কবলিত এলাকা হিসাবে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যকে ৪টি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে জোন ৫-এ।
জোন-৫ এ যে যে রাজ্যগুলি রয়েছে- জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশের পশ্চিম এলাকা, উত্তরাখণ্ডের উত্তর অংশ, গুজরাতের কচ্ছ উপকূল, বিহারের উত্তর অংশ, উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্য, আন্দামান এবং নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ।
জোন-৪ এ যে যে রাজ্যগুলি রয়েছে- হিমাচল প্রদেশের বাকি অংশ, লাদাখ, উত্তরাখণ্ডের বাকি অংশ, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের বাকি এলাকা, দিল্লি, সিকিম, উত্তর প্রদেশের উত্তরপ্রান্ত, বিহার, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের কিছু এলাকা, পশ্চিম রাজস্থান।
জোন-৩ এ যে যে রাজ্যগুলি রয়েছে- কেরল, গোয়া, লাক্ষাদ্বীপ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং হরিয়ানার বাকি অংশ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক। এই তালিকাতেও স্থান পেয়েছে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ।
জোন-২ এ যে যে রাজ্যগুলি রয়েছে- ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলি যেমন- কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর বাকি অংশ, তেলেঙ্গানা, অন্ধপ্রদেশের কিছু এলাকা, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এবং ওড়িশার কিছু এলাকা।
তুরস্কের মতোই রাজধানী নয়াদিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপ হবে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডাচ গবেষক ফ্র্যাঙ্ক হুগারবিটস। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানও। এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের উৎসস্থল আফগানিস্তানের উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বতের কন্দরে কোনও অংশে। সেখান থেকে কম্পনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে পাকিস্তান ও ভারতে। কল্পনা নয়, এমনটাই পূর্বাভাস ডাচ গবেষক ফ্র্যাঙ্ক হুগারবিটসের। কয়েকদিন আগে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে বলে ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর ঘোষণার পর ৭২ ঘণ্টা কাটার আগেই ভূগর্ভে তীব্র উথালপাথালে তছনছ হয়ে যায় দুই দেশ। রিখটার স্কেলে কম্পন ৭.৮ পর্যন্ত উঠে যাওয়ার ঘটনাই নয়, ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে ওঠার আগে তিন দিন পর্যন্ত অন্তত ৫০টা আফটার শক আরও বেশি বেসামাল করে দিয়েছে তুরস্ককে। এর মধ্যে একটি আফটার শক তীব্রতায় মূল কম্পনের চেয়ে অল্পই পিছিয়ে ছিল। এবার আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতেও এমনই তীব্র ভূমিকম্পের আশঙ্কা দেখছেন ফ্র্যাঙ্ক। যদিও নির্দিষ্ট করে কোনও দিন বা এলাকার কথা উল্লেখ করেননি তিনি।