Insulting Bengal: রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী! বাংলাকে অপমান করলেন রাজ্যপাল, বললেন তিনি
Insulting Bengal: ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন নিয়েও রাজ্য-রাজভবন দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে
হাইলাইটস:
• আবারও রাজ্য-রাজভবন দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে
• এবার ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছে রাজ্য সরকার এবং রাজভবন
• রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও গতকাল রাজভবনে পালিত হল ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’
Insulting Bengal: আবার রাজ্য-রাজভবন দেখতে চলেছে রাজ্যবাসী, এমনই ইঙ্গিত করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। গতকাল রাজভবনে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের উদ্যোগে পালিত হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। তবে এতে যথেষ্ট আপত্তি ছিল রাজ্য সরকারের। এই অনুষ্ঠানের কথা জানার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। তবে রাজ্য সরকারের আপত্তি উপেক্ষা করেই গতকাল রাজভবনে পালিত হল ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’।
গত সোমবার রাজ্যপালকে ফোন করে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অবশ্য ফোনের পাশাপাশি সেদিন রাতেই নবান্ন থেকে রাজভবনে একটি চিঠি পাঠিয়ে নিজের অনুরোধের পুনরাবৃত্তিও করেছিলেন তিনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধকে উপেক্ষা করেই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মতোই রাজ্যপাল রাজভবনে পালন করলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। কারণ ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের জন্য যদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে চিঠি এসেছিল রাজভবনে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও এদিন পশ্চিমবঙ্গবাসীকে প্রতিষ্ঠা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠান।
নবান্ন থেকে রাজভবনে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘আপনার সঙ্গে কথপোকথনের সময় আপনি সম্মত হয়েছেন যে, একতরফাভাবে এবং কোনওরকম আলোচনা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ দিবসের ঘোষণা করা ঠিক নয়। আপনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন আপনি করবেন না।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে কখনও বাংলায় পশ্চিমবঙ্গ দিবসের মতো কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি। দেশ বিভাজনের এই ঘটনাকে বাংলা সদাই মনে রেখেছে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হিসেবে। পশ্চিমবঙ্গের জন্ম কোনও বিশেষ দিনে হয়নি। আমরা বাংলায় জন্মেছি, বড় হয়েছি। কখনও এখানে কোনও দিন পশ্চিমবঙ্গ দিবসের মতো কোনও অনুষ্ঠানে হতে দেখিনি। এই ধরনের অনুষ্ঠান কোনও রাজনৈতিক দল নিজেদের প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্য করতেই পারে, কিন্তু এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের কোনও যোগাযোগ নেই।’’
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা, এই ধরণের কোনও অনুষ্ঠান রাজ্যপালের উদ্যোগে আয়োজিত হলে তা মানুষের মধ্যে সংশয়, অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক বিরূপতা তৈরি করতে পারে। এর পাশাপাশি রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালিত হলে তাতে যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ও রাজ্য মন্ত্রিসভার সম্মতি থাকবে না, তা-ও ওই চিঠিতে স্পষ্টভাষায় বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এর পরেও রাজ্যপাল রাজভবনে পালন করলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। ফলে গতকাল এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে রাজ্যপালের ভূমিকায় ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি সরাসরি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করলেন। রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করে রাজ্যপাল বাংলার মানুষকে অপমান করেছেন বলেও এদিন অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এখানেই শেষ না, তিনি সরাসরি কড়া ভাষায় আক্রমণও করেছেন রাজ্যপালকে। রাজ্যপাল যে এখন পদ্মপাল হয়ে গেছেন, এই বলেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “যেখানে এই প্রতিষ্ঠা দিবস আছে, সেখানে পালন করুক৷ মহারাষ্ট্রে দিবস আছে, সেখানে করুক৷ এখানে বিজেপি রাজনৈতিক চক্রান্ত করছে৷”
এদিন তিনি রথযাত্রা উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। যেমন প্রতিবছরের মতো এবছরও কলকাতার ইসকনে দড়ি টেনে রথযাত্রার সূচনা করেন তিনি। তেমনই বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে রাজভবনের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ওরা পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছে৷ আমার পশ্চিমবঙ্গে জন্ম, আপনাদেরও তাই৷ কোনওদিন এখানে এসব প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়নি৷ রাজ্য সরকার জানবে না, মানুষ জানবে না৷ কংগ্রেস, সিপিএম, কারও আমলে হয়নি৷ এখন বিজেপি বলছে বলেই করতে হবে সেটা তো হয় না। আমি গতকালই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন না করার জন্য অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়ে ছিলাম রাজভবনে৷ তাও শোনা হয়নি৷ এসব করা মানে বাংলাকে অবমাননা করা৷ বাংলার মানুষকে অসম্মান করা৷’
অবশ্য এদিন প্রতিষ্ঠা দিবস পালন নিয়ে রাজভবনের পক্ষ থেকেও পাল্টা বিবৃতি জারি করা হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের আপত্তির যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং যথাযথ জায়গায় রাজ্য সরকারের বক্তব্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও রাজভবনের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি জানানো হয়েছে৷ তবে রাজ্যপালের এই পদক্ষেপের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একদিকে যেমন গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কলকাতার ইসকনের রথযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। তেমনই অন্যদিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ কর্মসূচিতে এদিন সকালে রাজভবনে না গেলেও সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
আবার রাজভবনের এহেন পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বাংলার বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকরা একটি প্রতিবাদ মিছিল করেন। এই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তথা ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন সদস্য মনোজ তিওয়ারি, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন সহ বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদরা। এছাড়া এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান ক্লাব এবং আইএফএ-এর প্রতিনিধিরাও।
এইরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।