Abhishek Banerjee visit Thakurnagar: রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতুয়া ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে বাঁধা দেওয়ায় তৈরী হল তীব্র রাজনৈতিক চাপান-উতোর! সংঘর্ষের রেশ গড়ালো হাসপাতাল অবধি!
Abhishek Banerjee visit Thakurnagar: গতকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে ঢুকতে বাঁধা দেওয়া নিয়ে তীব্র সংঘাত হয় তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলের মধ্যে
হাইলাইটস:]
• রবিবার মতুয়া ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
• কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতা শান্তনু ঠাকুর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঠাকুরবাড়িতে ঢুকতে বাঁধা দেন
• যার ফলে তীব্র সংঘর্ষ হয় তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে
Abhishek Banerjee visit Thakurnagar: গতকাল অর্থাৎ রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেখানে অভিষেকের পৌঁছনোর আগেই তৈরী হয়েছিল তীব্র রাজনৈতিক চাপান-উতোর। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতা শান্তনু ঠাকুর অভিষেক বাবুকে মতুয়াদের ঠাকুরঘরে আসতেই দেবেন না বলে স্লোগান তোলেন। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে এই সংঘাতের কারণে মতুয়াদের ঠাকুরঘরে পুজো দিতে অক্ষম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শান্তনু তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ জানিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে ফিরে যান। ওপর দিকে, ওই সময় শান্তনু ঠাকুর, ঠাকুরঘরের দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসেছিলেন।
উত্তপ্ত মতুয়া গড়ে দাঁড়িয়ে শান্তনু ঠাকুর রবিবার বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগামী ৬ মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক পতন তবে। তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তারই জবাবে বলেন, ‘আমি ৩ মাস অন্তর ঠাকুরবাড়িতে আসবো, দম থাকলে আটকে দেখাক।” পাশাপাশি গতকাল একের পর এক চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তনু ঠাকুরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “উনি যে বাড়িতে থাকেন, সেখানকার জলের ব্যবস্থা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলকে চমকাচ্ছেন যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে সেই রাস্তাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করে দেওয়া। চাইলে ভিড় ভেঙে মন্দিরে ঢুকতে ৫ মিনিট লাগবে। শান্তনু ঠাকুর ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করছেন। কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে মতুয়া-মাটিকে। কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না আমার, আমি পুজো দিতে এসেছিলাম।” শান্তনু ঠাকুর তথা বিজেপির বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন তিনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “আমি গেলে নাকি ঠাকুরবাড়ি কলুষিত হবে৷ আর যার হাতে গোধরার রক্ত লেগে আছে, তাকে ঠাকুরবাড়িতে স্বাগত জানাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান জুতো পরে ঢুকেছে মন্দিরে। আমি ছবি ট্যুইট করেছি। আজ নাকি আমার শেষ যাত্রা বলেছেন শান্তনু ঠাকুর৷ আমার মৃত্যু কামনা করছেন উনি। আমি অবশ্য ওনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আপনি (শান্তনু ঠাকুর) আরও ফুলে ফেঁপে উঠুন।”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “শান্তনু ঠাকুরের নির্দেশে মন্দিরের গেটে তালা দিয়ে দিয়েছে, যাতে আমি প্রবেশ করতে না পারি৷ আমি এই বাংলার ছেলে। ওদের ৩০০ সমর্থক ছিল, আমাদের ৩০০০ ছিল। সংখ্যার জেরেই ঢুকতে পারতাম। কিন্তু ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও-এর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না আমি। যারা আজ কলুষিত করেছে ঠাকুরবাড়িকে, কালি লাগিয়ে দিয়েছে, মতুয়া ভাইয়েরা যেন তাদের ক্ষমা না করে৷”
বিজেপিকে তুমুল নিশানা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে৷ আমরা মানুষের দরবারে আছি। বিজেপি আছে হাইকোর্টের দরবারে৷ কী করে ভোট আটকানো যায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজেপি। বিজেপি কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য টাকা তারা আমাদের দিচ্ছে না কারণ ওরা বাংলায় গো-হারা হেরেছে৷ আগামী দিনে রাস্তায় নামবো মানুষের লড়াইয়ের স্বার্থে। আপনাদের রাস্তায় থাকতে হবে৷ পঞ্চায়েত ভোট হবে৷ আর আমরা দিল্লি যাব তার এক মাসের মধ্যেই।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঠাকুরনগর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরই তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে শুরু হয় তুমুল ঝামেলা। তৃণমূলের লোকজনেদের মারে তাদের বেশ কয়েক জন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে বিজেপির পক্ষ থেকে। অপরদিকে, তৃণমূলও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। আহতদের আলাদা আলাদা ভাবে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের রাজনৈতিক সঙ্গীরা। কিন্তু সেখানেও আবার সংঘাতে জড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি।
বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার অভিযোগ, অভিষেকের অনুগামীরা মারধর করেছেন তাঁকেও। তিনি সংঘর্ষে আঘাত পাওয়া আহতদের নিয়ে চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরও গায়ে হাত তোলেন তৃণমূলের লোকজন এবং পরনের পাঞ্জাবী ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধেও তিনি অভিযোগ করেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে অশোক বাবু জানিয়েছেন, ‘‘আমার শরীরের কোথায় মারেনি বলুন! গণপিটুনি বোঝেন?’’ বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের আজকের রাজনীতি, সংস্কৃতি, গণতন্ত্র – সমস্ত কিছু শেষ। আমি কিছু বলিনি এতদিন। আজ অভিষেক যেটা পুলিশকে দিয়ে করালো, সেটা সম্পূর্ণভাবে একতরফা ঘটনা।’’
হাসপাতালে মারামারির সময় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীও আহত হন। সব মিলিয়ে সকাল থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনা সন্ধ্যাতেও চলল মতুয়া অধ্যুষিত ঠাকুরনগরে। ওপর দিকে, তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর যান হাসপাতালে। তাঁদের দলের লোকজনকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মমতাবালা ঠাকুর। সব মিলিয়ে গতকাল উত্তেজনা চরমে উঠেছিল ঠাকুরনগরে।
এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।