স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় থাকার পরও কার্ড নিতে প্রত্যাখ্যান ৫৩টি বেসরকারি হাসপাতালের! ফলে হাসপাতালকে ১০ কোটির বেশি জরিমানা দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার
এবার আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ফেরানো যাবে না
২০১৬ সালে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি হল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। এর মূল লক্ষ্য ছিল রাজ্যের সাধারণ মানুষের যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে কোনও সমস্যা না হয়। এই প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে রাজ্যের বাসিন্দারা বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য পেতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও তারা এই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা পাবে। এই প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ২০০টি স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা রয়েছে। যাতে কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় এবং তারই সাথে রাজ্যবাসীকে উচ্চমানের চিকিৎসা দেওয়াই ছিল এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ফেরানো নিয়ে এর আগে একাধিকবার সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বরাবরই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ফিরিয়ে দিলে সাধারণ মানুষকে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে সরকারের তরফে এই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মাসে ১০২টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনও ব্যবস্থা নেওয়া নিয়েছিল। ২০২১ সালে স্বাস্থ্যসাথীর বার্ষিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের বেশিরভাগই আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার বা যাদের নিজস্ব জমি নেই। অনেক সিভিক ভলান্টিয়ারও স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় এসেছে।
এবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রোগীদের সঠিকভাবে পরিষেবা না দেওয়ার জন্য গত দেড় বছরে ৫৩টি বেসরকারি হাসপাতালকে ১০ কোটি ৯ লাখ টাকা জরিমানা করার পদক্ষেপ করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এর মধ্যে ৭ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই সব বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে অত্যাধিক বিল নেওয়া এবং স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ উঠেছিল।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এই জেলাগুলিতে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিষেবার জন্য সবথেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। এই জেলাগুলিতে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হয়। তবে প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা প্যাকেজ। সাধারণ অসুখই শুধু নয়, সমস্ত জটিল রোগের চিকিৎসা সম্ভব স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে। যেমন হার্টের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে পাওয়া যায় ৬০ হাজার টাকার ক্যাশলেশ চিকিৎসা। প্রথম দিকে বেশ কিছু বাছবিচার থাকলেও ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে স্বাস্থ্যসাথীকে অবাধ বলে ঘোষণা করেন রাজ্য সরকার। অর্থাৎ বাংলার সকলেই এই কার্ডের সুবিধা পাবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।