কম বয়সেই যদি মাথা ভর্তি পাকা চুল হয়ে যায়, আপনি চুলে রঙ করার বদলে খেতে পারেন এই ৭টি খাবার
অসময়ের মাথা ভর্তি পাকা চুল অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে
বয়স হলে চুলে তো পাক ধরবেই কারণ এটিই প্রাকৃতিক নিয়ম। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যেও যেমন প্রভাব পড়ে, ত্বকে এবং চুলেও তার ছাপ দেখা যায়। ত্বকের টানটান ভাব হারাতে থাকে। এদিকে চুলেও পাক ধরে। আবার কম বয়সে শারীরিক নানা জটিলতার কারণেও অনেকের চুল পেকে যায়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘অকালপক্কতা’ বা ‘প্রিম্যাচিওর হেয়ার গ্রেয়িং’ বলা হয়। নানা কারণেই এমন হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৩০ বছরের পর থেকে প্রতি বছরই ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে চুল পেকে যায়। তবে চুল পেকে যাওয়ার প্রধান কারণ হল ত্বকে মেলানিন তৈরির হার কমে যাওয়া। এ ছাড়া জিনগত কারণেও চুল পেকে যেতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণেও চুলে পাক ধরে। এই সাদা চুল কালো করতে অনেকেই রাসায়নিক দেওয়া রং চুলে সরাসরি ব্যবহার করেন। যেটি খুবই ক্ষতি করে চুলকে। অনেকে আবার ঘরোয়া পদ্ধতির উপরেও ভরসা রাখেন। এখানে আমরা ৭টি খাবারের কথা আলোচনা করেছি, যেগুলি আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করলে লাভবান হবেন। দেখে নিন একনজরে –
১. সবুজ শাক-সবজি:
আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি যোগ করুন। আর আপনি এইগুলি নিত্যদিনই খেতে পারেন আপনি। অনেকেই আছেন যারা সবজি খেতে একদমই পছন্দ করেন না। কিন্তু এরকম করলে চলবে না। বরং প্রতিদিন সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে আপনাকে। যেমন আপনি পালং শাক, ফুলকপি, ব্রকোলি, বাঁধাকপির মতো সবজি খেতে পারেন। এইসব সবজিতে আছে আয়রন, ফলেট, ভিটামিন, ক্যালশিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান। যা আপনার চুলের জন্য খুবই ভালো। ভিটামিনের অভাবে চুল পাক ধরলে, এইসব সবজি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করবে। গাজর, বিটের মতো শীতকালীন সবজিও রাখুন আপনার খাদ্যতালিকায়। এসব সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ফোলেট, ভিটামিন, ক্যালশিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্ট থাকে। যা আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
২. আমলকি:
শুধু চুল কালো করা নয়, নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে আমলকি। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন C-তে ভরপুর আমলকি বিপাকহারও বাড়িয়ে তোলে। এইসব শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি সঠিক নিয়মে চললে, চুল পেকে যাওয়ার গতি কিছুটা হলেও শ্লথ করা যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আমলকির রস খাওয়া যেতে পারে। আবার ভাতের সঙ্গে আমলকি সেদ্ধ খেলেও একই উপকার মেলে।
৩. ডিম:
ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আর অ্যামিনো এসিড, যা চুল পাকা রোধে বিশেষ উপকারী। অসময়ে চুলে পাক ধরার অন্যতম কারণ হিসেবে ভিটামিন B12-এর ঘাটতিকে চিহ্নিত করেন চিকিৎসকরা। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে চুলে অসময়ে পাক ধরার একাধিক কারণের মধ্যে এটিকে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আপনি প্রতিদিন ডিম খেতে পারেন। ডিম খেলেও আপনি উপকার পেতে পারেন। প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় ডিম রাখলেই কিন্তু চুলও ভালো রাখতে পারেন। কারণ ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B12। যা আপনার চুল প্রাকৃতিকভাবেই কালো রাখতে সাহায্য করে।
৪. ডাল:
নানা ধরনের ডাল বা শস্যজাতীয় খাবার আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তো পাবেনই, তার পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ঘাটতিও পূরণ হবে। কারণ ডালে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B9। যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে মুসুর ডাল বেশি উপকারী। এই ডালটি সেদ্ধ করেও খেতে পারেন।
৫. লিকার চা:
অনেকেই শ্যাম্পু করার পর চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে থাকেন। বাইরে থেকে চুলের চকচকে ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে চা পাতা ভেজানো জল। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুধ এবং চিনি ছাড়া কালো চা ত্বকে মেলানিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সহায্য করে।
৬. দুগ্ধজাত উপাদান:
দুগ্ধজাত উপাদান কিন্তু চুলের জন্য খুবই উপকারী। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দুধ আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। শারীরিক নানা কারণে অনেকেরই দুধ খাওয়া বারণ থাকে। আপনারও যদি এরকম কিছু সমস্যা থাকে তবে দুধের বদলে অন্যান্য দুগ্ধজাত উপাদান খেতে পারেন আপনি। আপনি পারলে টক দই খেতে পারেন। টক দই-তে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এবং এটি একটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। অথবা দুধের থেকে তৈরি ছানাও খেতে পারেন। কারণ দুগ্ধজাত উপাদানে থাকে ভিটামিন B12, ক্যালশিয়াম এবং প্রোটিন। যা মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করে। যা আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৭. সয়াবিন:
সয়াবিনে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। চুলের অকালপক্কতা রোধ করার প্রয়োজনে আপনাকে প্রয়োজনী প্রোটিনও খেতে হবে। এছাড়াও সয়াবিনে আছে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা আপনার চুলের অকাল-পক্কতা রোধ করতে সাহায্য করে।