আপনার খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন কী এই ৫টি খাবার থাকে? তাহলে জেনে নেওয়া উচিত এই খাবারগুলি হাড়ের ক্যালশিয়ামকে শুষে নেয়
এই খাবারগুলি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
বয়স বাড়ার সাথে সাথেই দাঁতের ক্ষয়, কোমড়ে ব্যথার মতো সমস্যায় ভুগছেন অধিকাংশ মানুষ। এর সঙ্গে জয়েন্টেও ব্যথা অনুভূত হয়। এই সকল সমস্যার প্রধান কারণ হল ক্যালসিয়ামের অভাব। শরীরের সম্পূর্ণ ওজন গিয়ে পড়ে হাড়ের উপর। তাই হাড় শক্ত থাকা সবার আগে জরুরি। এই অঙ্গের কোনও ক্ষতি হলে আপনার জীবনে নেমে আসবে গাঢ় অন্ধকার। এক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিস থেকে শুরু করে, বোন ক্যানসার হতে পারে। এমনকী অনেকের তো হাড়ের সংক্রমণ পর্যন্ত হয়। সে কারণে সকলেই খাদ্যাতালিকায় রাখেন ক্যালসিয়ামে পরিপূর্ণ খাবার। কিন্তু, এতেও যে সমস্যা সমাধান হয় তা নয়। সঠিক খাদ্যগ্রহণের পরেও অনেকের ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। জানেন কি এর আসল কারণ কি? এমন কিছু খাবার আছে যা হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে নেয়। সে কারণে কমতে থাকে ক্যালসিয়াম। দেখা দেয় একাধিক শারীরিক জটিলতা। আজই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন এই কয়টি খাবার। দেখে নিন কী কী খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটতে পারে –
নুন:
সোডিয়াম যুক্ত খাবার যতটা পারবেন কম খান তাতে কোনও সমস্যা নেই। অধিক নুন শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস করে। এই বদভ্যাস শরীরে জটিলতা তৈরি করে। অস্টিওপোরোসিস রোগ হতে পারে ক্যালসিয়ামের অভাবে। এতে হাড় দুর্বল হয়ে যায় ও সহজে ভেঙে যায়। ছোটখাট কোনও চোট লাগলেই সমস্যার সৃষ্টি হয় তখন। তাই হাড়কে সুস্থ রাখতে সোডিয়াম যুক্ত খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
মিষ্টি:
মিষ্টি জাতীয় খাবার হাড়ের জটিলতা বৃদ্ধি করে। ফলে বেশি মিষ্টি খেলেই আপনার শরীরে সমস্যা তৈরি হতে পারে। মিষ্টি যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তেমনই হাড়ের জন্যও ক্ষতিকর। এই খাবারটি ডায়াবেটিসের মতো জটিল অসুখের প্রধান কারণ। এটি হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে হাড়কে দুর্বল করে দেয়। এমনকী ওজন বাড়াতে পারে দ্রুত গতিতে। আপনি যদি এই খাবারটি অত্যধিক পরিমাণে খান তবে পুষ্টির ঘাটতি হয়। তখন শরীরে তৈরি হয় জটিলতা। তাই হাড়ের ক্ষয় হয় পরোক্ষভাবে। ফলে মিষ্টিমুখ করার আগে সাবধান। এখন থেকে যতটা পারবেন মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে দূরত্ব বাড়ান। তেমনই চায়ে চিনি খাওয়াও বন্ধ করুন।
মদ্যপান:
অনেক গবেষণাতেই প্রমাণিত হয়েছে, মদ্যপান শরীরে হাড়ের ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ গ্লাসের বেশি মদ্যপান করলে হাড়ে ক্যালসিয়াম কমতে থাকে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে মদ্যপান বন্ধ করুন। আবার অন্যদিকে মদ্যপানের অভ্যেস যে শরীরে নানান জটিলতা তৈরি করে তা আমরা সকলেই জানি। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে বন্ধ করুন মদ্যপান।
সোডা:
২০১৪ সালে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হাজার মহিলা যাঁরা প্রতিদিন সোডা খান, তাঁদের কোমরের হাড়ে চিঁড় ধরার আশঙ্কা বেশি ছিল। এখনকারদিনে সোডা প্রায় সকলেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সোডা পান করা আপনার হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। এটি প্রধানত মহিলাদের হিপ ফ্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়।
কফি:
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত যে, কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন শরীরে সমস্যা তৈরি করে। এই পানীয় মুখে তুললে বোন ডেনসিটি কমে যায়। তাই সচেতন থাকাটা সবার আগে জরুরি। তবেই সুস্থ থাকতে পারবেন। সারাদিনে একাধিকবার কফি খাওয়ার অভ্যেস আছে অনেকের। এর কারণে হাড়ের সমস্যা তৈরি হতে পারে। ক্যাফেইন হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে নেন। এতে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে একাধিকবার কফি খাওয়ার অভ্যাস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
হাড়ের শক্তি বাড়ান:
চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম প্রয়োজন। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন এক গ্লাস করে হলুদ দুধ খান। এতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে। হলুদ দুধের গুণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আবার খেতে পারেন কাঠবাদাম। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। ১০০ গ্রাম কাঠবাদামে ২৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। তাই দূর হতে পারে যে কোনও শারীরিক জটিলতা।অন্যদিকে হাড়ের স্বাস্থ্য ফেরাতে চাইলে ভিটামিন D-এর ঘাটতিও মেটাতে হবে। এই ভিটামিন ক্যালশিয়ামকে হাড়ে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। আপনি সূর্যের আলো থেকে এই ভিটামিন পেতে পারেন। এই ভিটামিন থাকে মাছ, লেবু, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে। আরও একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করাও জরুরি। দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। অফিসে থাকাকালীন কাজের চাপের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা একভাবে বসে থাকেন। তাই কাজের ফাঁকে একটু হাঁটা-চলা করুন। শারীরিক ভাবে অ্যাক্টিভ থাকলে শরীর ততো সুস্থ থাকবে। আর কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে একটুও দেরি করবেন না।