সরস্বতী পুজো মানে হল বাঙালির “ভ্যালেন্টাইন্স ডে”
আমরা বাঙালিরা সরস্বতী পুজোর দিন “প্রেম দিবস” হিসাবে পালন করি
হিন্দু ধর্মানুসারে বিদ্যা এবং সঙ্গীতের দেবী হলেন মা সরস্বতী। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো আয়োজিত হয়। এই তিথিটি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। এটি বাঙালি প্রথা এবং হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান উৎসব। এই পুজোর জন্য বাঙালিরা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্যে সরস্বতী পুজো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মা সরস্বতীর আরাধনা করলে জ্ঞান ও বিদ্যা লাভ হয়।
সরস্বতী পুজোর সকালে অঞ্জলি দেওয়ার রীতি আছে। আট থেকে আশি প্রায় সকলেই বাগদেবীর সামনে অঞ্জলি দিয়ে তাদের উপবাস ভাঙ্গে। প্রচলিত লোকাচার অনুযায়ী, সরস্বতী পুজো সম্পন্ন হওয়ার আগে পর্যন্ত কুল খেতে নেই। যদিও এর পেছনে রয়েছে আরও অনেক ব্যাখ্যা। তবে স্কুল- কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাগদেবীর আরাধনার করার পরে অঞ্জলি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কুল খাওয়ার রীতি মেনে আসছে বহুদিন ধরে। সরস্বতী পুজোর সাথে বাঙালি অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। ছোটবেলায় আমরা সকলেই দেবী সরস্বতীর সামনে হাতেখড়ি দিয়েছি। ওই আঁকাবাঁকা হাতেই অ-আ-ক-খ লিখে আমাদের শিক্ষার্থী জীবন শুরু করেছি। বাগদেবীর চরণে বই খাতা রেখে ভালো রেজাল্টের প্রার্থনা করেছি। আমাদের মধ্যে কারও কারও বয়েজ স্কুল বা গার্লস স্কুলের ঘেরাটোপ কাটিয়ে প্রথম প্রেমের হাতেখড়িও হয়েছে কোনও এক সরস্বতী পুজোর দিনেই।
বাঙালিরা মনে করে যে, পুণ্য লগ্নে প্রেম করার মজাই আলাদা। তারা বিশ্বাস করে শুভ কাজে দেব-দেবীর আশীর্বাদ থাকলে তা শেষ পরিণতি পায়। এই কারণেই হয়তো সরস্বতী পুজো বাঙালিদের জন্য “প্রেম দিবস” হয়ে উঠেছে। এই দিন বাঙালি পালন করে “ভ্যালেন্টাইন্স ডে।”
এই দিন খালি দেখা যায় শাড়ি-পাঞ্জাবির মেলা। শাড়ি-পাঞ্জাবির কম্বিনেশনে বাঙালিকে চেনা যায় সহজেই। বাঙালিয়ানা সাজে তারা ধরা দেয় সরস্বতী পুজোর দিন। তারপর বাঙালিয়ানা খাবারের পালা। স্কুল-কলেজে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। আবার অনেকে বাঙালিয়ানা রেস্টুরেন্টে যান খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সারতে।
এইবছর সরস্বতী পুজো কবে?
এইবছর সরস্বতী পুজো ২৬শে জানুয়ারি (বাংলার ১১ই মাঘ) আয়োজিত হবে। প্রতিবছর বছরের শুরুতেই হয় বাগদেবীর আরাধনা।
বাঙালি যেকোনও উৎসবের মধ্য দিয়েই সকলকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ বাঙালিদের মধ্যে আন্তরিকতা বোধ অনেক বেশি। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে আয়োজিত সরস্বতী পুজো আমাদের শৈশবের বেড়ে ওঠার সাথী, কৈশোরের ভালোলাগার সঙ্গী হয়ে উঠেছে। বড়ো হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের মনে সরস্বতী পুজোর টান সর্বদাই বিরাজমান। আর তার সাথেই এই দিন বাঙালির “প্রেম দিবস” হিসাবেও আমাদের মনে সেই জায়গা করে নিয়েছে।