উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট্টো রাজ্য নাগাল্যান্ডের গ্রামগুলির সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিন
নাগাল্যান্ডের ছোট ছোট গ্রামগুলি যেন তুলির মতো আঁকা
উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘ, পাহাড় ও ঝর্ণার দেশ হল মেঘালয় রাজ্য। ভারতের এই ছোট্টো রাজ্য নাগাল্যান্ডের আরেক নাম হল হর্নবিল ল্যান্ড। চারিদিকে উঁচু উঁচু সব পাহাড়, হাত বাড়ালেই মেঘের স্পর্শ, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণা, স্বচ্ছ নদী, লেক ও ছবির মতো সুন্দর গ্রাম এই সব কিছু মিলেমিশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে মেঘালয় আকর্ষণ করে ভ্রমণপ্রেমীদের। চোখ জুড়ানো পাহাড়ি দৃশ্য আর শীতল আবহাওয়ার কারণে এই রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরকে বলা হয় ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে শহরটির উচ্চতা প্রায় ১,৫০০ মিটার। বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান চেরাপুঞ্জিও মেঘালয়েই অবস্থিত। এই রাজ্যের ভৌগোলিক কাঠামো অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, সিকিম ও হিমাচল প্রদেশের মতো। নাগাল্যান্ডে রয়েছে অনেক ছোটো ছোটো সুন্দর গ্রাম। অফবিটপ্রেমী পর্যটকদের কাছে সেগুলি এক একটি যেন গুপ্তধন। চলুন গ্রামগুলির সাথে একটু পরিচয় করা যাক-
খোনোমা গ্রাম:
নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সবুজের দেশ। যেখানে বহু বছর ধরে মানুষ সংযোগ স্থাপন করে আসছে গাছেদের সঙ্গে। এশিয়ার প্রথম গ্রাম হিসাবেও জনপ্রিয় নাগাল্যান্ডের এই গ্রাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে ইন্দো-মায়নামার বর্ডারের কাছে অবস্থিত এই গ্রামটি।
মোকোকচুং গ্রাম:
নাগাল্যান্ডের মোকোকচুং গ্রামটি মোকোকচুং জেলার সদর দপ্তর। এটি রাজ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং সাক্ষরতার হারের জন্যও পরিচিত। উনবিংশ শতকে গোড়ার দিকে মোকোকচুং ছিল রোংমেই নাগা উপজাতি বসবাসকারী তুয়েনসাং জেলার একটি মহকুমা। পরে ১৯৭২ সালের ৩০শে অক্টোবর তুয়েনসাং জেলার কাকচিং, পেরেন জেলার জোতসোমা (বর্তমানে জুনহেবোটো) এবং কিফির জেলার লংলেং-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলায় পরিণত হয়।
উংমা গ্রাম:
নাগাল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাম হওয়ায়, এই জায়গাটি একটি নির্দিষ্ট আকর্ষণ এবং বিস্ময় ধারণ করে। আপনি যদি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চান নাগাল্যান্ডের সংস্কৃতির, তাহলে এটি সেই জায়গা যেখানে আপনাকে যেতেই হবে।
নিতই গ্রাম:
নিতই গ্রামটি পর্যটকদের কাছে সেভাবে মান্যতা পায় না। তাই এই গ্রামকে একেবারেই অবহেলিত বলা যায় কিন্তু এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সর্বাধিক সুন্দর। এই গ্রামের জনসংখ্যা ৪০২ জন, কিন্তু ৮০ শতাংশই শিক্ষিত। কিফিরে জেলা থেকে (কোহিমা থেকে ৮ ঘণ্টা দূর) খুব সহজ ভাবেই এই গ্রামে পৌঁছনো যায়।
কিফিরে গ্রাম:
নাগাল্যান্ডের ইপং নদীর তীরে অবস্থিত কিফিরে গ্রামটি কিফিরে জেলার সদর দপ্তর। কিফিরে একসময় ছিল দুর্গম গ্রাম। যদিও বর্তমানে এটি নাগাল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৫০০০। এরা প্রধানত নাগা উপভাষা আও, হামার, রেংমা এবং চাখেসাং ভাষাভাষি মানুষ।
লংলেং গ্রাম:
লংলেং হল নাগাল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক স্থান। ১৮৯২ সালে এই গ্রামের প্রতিষ্ঠা করেন লোথা নাগা উপজাতির লোকেরা। আধুনিক সংস্কৃতি বা প্রযুক্তির প্রভাব ছাড়াই এখানকার লোকেরা তাদের ঐতিহ্যগত জীবনযাপনের পদ্ধতি আজও সংরক্ষণ করে রেখেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই নাগা গ্রামে জীবন উপভোগ করার মজাই আলাদা।
মোলুং গ্রাম:
এই গ্রামটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত হওয়ার প্রধান কারণ হল, এটি এই ভূমিতে খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে এসেছিল। মোলুং গ্রাম আপনার জন্য নাগাল্যান্ডের বিস্ময়কর স্পন্দনগুলি অন্বেষণ করার সুযোগের চেয়ে কম নয়। এছাড়াও আপনি আপনার প্রিয়জনদের সাথে এমন কিছু সত্যিই সুন্দর ছবি তুলতে পারেন যা আগে কখনও দেখা যায় নি এমন প্রাকৃতিক জায়গা এবং আপনাকে আজীবন স্মরণীয় করে রাখবে।