হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়াতে কোন কোন অভ্যাস নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া দরকার জেনে নিন

হার্ট শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ

হাইলাইটস:

• হৃদরোগ সংক্রান্ত ক্রমশ বেড়েই চলেছে

• অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যস্ত জীবনযাত্রা, শরীরচর্চায় ফাঁকি ইত্যাদি নানা কারণেই হৃদরোগের সম্ভাবনা যখন-তখন ধেয়ে আসতে পারে

• আমাদের নানা ভুল সিদ্ধান্ত ও অজ্ঞতা এই অসুখের মূল কারণ

যখন হৃদপিণ্ডের কোনও শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টোরলের সমস্যা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ এগুলি মূলত হার্ট অ্যাটাকের কারণ। হার্ট যেমন আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, তেমনই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। তাই হার্টের যত্ন নেওয়া যে কতটা জরুরি তা বলাই বাহুল্য।

বর্তমানে হার্টের অসুখে আক্রান্তের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিলেও আমরা অনেক সময়ই হার্টের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করি৷ আধুনিক জীবনের কর্মব্যস্ততা, মানসিক উদ্বেগ, জীবনযাপনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এইগুলি মূলত অল্প বয়সীদের মধ্যেই দেখা দেয় ফলে হৃদরোগের শিকারও তারাই বেশি হচ্ছেন। কমবয়সীদের মধ্যে বদভ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় যার ফলস্বরূপ আমাদের হার্ট মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বদভ্যাসগুলি জেনে রাখুন –

ধূমপান:

‘ধূমপান স্বাস্থ্যে পক্ষে ক্ষতিকর!’ এই কথাটি পথে-ঘাটে, টিভি-রেডিওতে, বিজ্ঞাপনে এমনকি সিগারেট-বিড়ির প্যাকেটে লেখা থাকে। কিন্তু তাও কারও হুস ফেরে না। ধূমপান হল হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। এখন ধূমপান খুবই বেড়েছে। আগে যেখানে শুধু ভারতীয় পুরুষেরা এই নেশায় আবন্ধ ছিল, সেখানে এখন মহিলাদের মধ্যেও এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শুধু হার্টের নহ, ধূমপান করলে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের প্রবল ক্ষতি হয়। ধূমপানের ক্ষতির কথা জেনেও অনেকেই এই আসক্তি ছাড়তে পারে না৷ আসলে কার্বন মনোক্সাইড হল সিগারেটের একটি প্রধান উপাদান যা স্বাস্থ্যকর ব্লাড কাউন্ড কমিয়ে দেয় এবং কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়া হার্টের শিরা এবং ধমনীতে ব্লকেজ দেখা যায়। যা থেকে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, স্ট্রোক, হার্ট অ্যার্টাকের সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে। যেখানে হৃদরোগে মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ দায়ীও ধূমপান। তাই হার্টকে এবং স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে হলে ধূমপানকে চিরজীবনের জন্য বিদায় জানাতে হবে।

মানসিক চাপ:

পেশাগত হোক বা ব্যক্তিগত যে কোনও জায়গাতে মানসিক চাপ তো থাকবেই। এই চাপ বা দুশ্চিন্তা দিন দিন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যে শারীরিক সুস্থতার দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা শরীরের খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই চিকিৎসকদের মতে, হার্ট ভালো রাখতে গেলে সবার প্রথমে মানসিক ভাবে ভালো থাকা জরুরি। কারণ অতিরিক্ত চাপ হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং যা থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই মানসিক চাপকে বাড়তে দেওয়া চলবে না। আপনি মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য নিয়মিত শরীরচৰ্চা করতে পারেন। কারণ নিয়মিত শরীরচৰ্চা মনকে শান্ত থাকে এবং শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে, তার সাথে আপনার হার্টও সুস্থ থাকবে।

অলস জীবনযাত্রা:

বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে যে, অলস জীবনযাত্রাও হার্টের অসুখের অন্যতম কারণ। এখনকার দিনে কাজকর্ম মস্তিষ্ককেন্দ্রিক। অর্থাৎ শারীরিক কসরত কম, মস্তিষ্কের কাজ বেশি। এই কারণে দিন দিন জীবনযাত্রার মান খারাপ হচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রম কাকে বলে মানুষ কার্যত ভুলেই গিয়েছেন। ফলে শরীরে জমা হচ্ছে কোলেস্টেরল, বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেশার। এই কারণেই হার্টের রোগ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা চাই। পারলে মেডিটেশনও করুন। এইভাবেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।

ওজন বেশি থাকলে:

ওজন বেশি থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য সুখকর না। ওজন বেশি থাকলে বিভিন্ন ক্রনিক অসুখ শরীরের মধ্যে বাসা বাঁধে। এই তালিকায় রয়েছে ডায়াবিটিস, ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস বৃদ্ধি সহ হাজার অসুখ। তাই ওজন বেশি থাকলে সতর্ক হন। BMI ১৮ থেকে ২৫-এর ভিতর রাখতে হবে। এই উদ্দেশ্যে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু বদল আনুন। তার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচৰ্চাও করতে পারেন।

আবার ওয়ার্ক ফর্ম হোমের যুগে বাড়িতে থেকে থেকে অনেকেই হঠাৎ করেই ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন নিজের। আর তার সাথেই মুখরোচক খাবার অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের জাঙ্কফুড খাওয়ার প্রবণতায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার দিকে নজর দিলেই দেখা যাবে যে এমন কিছু অস্বাস্থ্যকর, প্রক্রিয়াজাত খাবার আমরা ঘন ঘন খেয়ে থাকি যা হার্টের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। যে কোনও জাঙ্ক ফুডে অতিরিক্ত নুন বা অ্যাডেড সুগার থাকে৷ তাই এগুলি বেশি খেলে ব্লাড প্রেশার এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে নিয়মিত জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর প্রভাব ধূমপানের চেয়েও মারাত্বক হতে পারে। তাই হার্ট ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার খাবারের পুষ্টিগত উপাদান দেখে নিতে হবে এবং বাইরে খেতে হলেও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এর ফলে আমাদের শরীর, স্বাস্থ্য এবং হার্ট সবই ভালো থাকবে।

মদ্যপান:

শুধু ধূমপান নয়, মদ্যপানও মানুষের হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ। কারণ অ্যালকোহলও শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এই ট্রাইগ্লিসারাইড হল এক ধরনের অস্বাস্থ্যকর চর্বি যা বেড়ে গেলে শরীরের ক্ষতি হয় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়৷ কিন্তু মদ অনেকেই নিয়মিত পান করেন। আর সেই কারণেই শরীরে বাড়তে থাকে সমস্যা। আবার অত্যাধিক অ্যালকোহল খাওয়ার আরও খারাপ প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে আর্টারি ব্লকেজ এবং ওজন বেড়ে যাওয়া। আসলে অ্যালকোহল সরাসরি শরীরের কিছু অঙ্গের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে হার্ট। তাই হার্টকে বাঁচাতে চাইলে মদ্যপানও চিরকালের মতো ছাড়তে হবে।

এইরকম স্বাস্থ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.