Partha Chatterjee News: নিয়োগ দুর্নীতি মামলা একের পর এক মোড় নিতে শুরু করেছে
হাইলাইটস:
•নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ট অর্পিতা মুখোপাধ্যায়
•ইডির অভিযানে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় নগদ ৫০ কোটি
•গতকাল আদালত থেকে বার হওয়ার মুখে টাকার উৎসের জবাবে পার্থবাবু বলেন, “খুঁজে বার করুন”
Partha Chatterjee News: গতবছর ২২শে জুলাই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee News) কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জোরায় তাঁর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ ছিল শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন তিনি নিয়োগ দুর্নীতির আঁতুরঘর গড়ে তুলেছিলেন। তবে একথা এখনও প্রমাণিত হয়নি।
এর ঠিক পরেই পার্থ ঘনিষ্ঠ মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ায় ফ্ল্যাটেও হানা দিয়েছিল ইডি। সেখানে গিয়ে চক্ষু চরকগাছ হয়ে গিয়েছিল ইডির আধিকারিকদের। অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ায় ফ্ল্যাটে রাতভোর তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। এই টাকার পাহাড় দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবাসী। হিসাব বলছে অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল প্রায় নগদ ২১ কোটি টাকা। অন্যদিকে বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। শুধু নগদ টাকা নয়, তার সাথে ছিল লক্ষ লক্ষ টাকার সোনার গহনাও। এক সঙ্গে এত কোটি নগদ টাকার উৎস কী? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এত টাকা এবং লক্ষ লক্ষ টাকার সোনার গহনা পেলেন কী করে, ফলে ইডির হাতে গ্রেফতার হন অর্পিতাও। তারপর কেটে গেছে একটা বছর। এখনও জেলের ভাতই খেতে হচ্ছে পার্থ-অর্পিতাকে। তারপর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে। সকলেরই মনে একটাই প্রশ্ন, এই বিপুল পরিমান অর্থের উৎস কী? এইসবই কী নিয়োগ দুর্নীতির টাকা? চাকরি চুরির টাকা? কিন্তু সে সব নিয়ে সরাসরি কোনও কথা কোনও দিনই বলেননি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। এইদিকে অর্পিতাও আদালতে জানিয়েছিলেন, ওই টাকা-গয়না কোনোটাই তার নয়। এবং অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীরও দাবি করেছেন, উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকার সাথে পার্থবাবুর দূর দুরন্তেও কোনও যোগাযোগ নেই।
এরপর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার জল বহুদূর গড়িয়েছে। উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমান টাকার উৎস কী? এই প্রশ্নের মুখোমুখি আগেও হয়েছিলেন পার্থ এবং অর্পিতা। এই প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু দাবি করেছেন এই টাকা তাঁর না। তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। কিন্তু অর্পিতা দাবি করেছিলেন তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা সবই পার্থবাবুর। এমনকি তিনি আরও দাবি করেছিলেন, এই বিপুল পরিমান টাকা কীভাবে তাঁর বাড়িতে এল সে ব্যাপারেও তিনি কিছু জানেন না। শুধু এখানেই শেষ নয়, তাঁর কথায়, যেখানে টাকা রাখা হত সেই ঘরেও নাকি তাঁর কোনও প্রবেশাধিকার ছিল না। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
গতকাল অর্থাৎ সোমবার আদালত থেকে বার হওয়ার মুখে সাংবাদিকদের তরফে আবারও প্রশ্ন করা হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। প্রশ্নটি ছিল, অর্পিতার বাড়িতে উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকার উৎস কী? আর ঠিক তখনই যা জবাব দেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, তাতে চমকে যান আদালত চত্বরে উপস্থিত প্রায় সকলেই। অবশ্য এর আগেও বহুবার তাঁকে এই অর্থের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু, কোনও উত্তর দেননি তিনি। তবে এ দিন তিনি তিনটি শব্দে তাঁর উত্তর শেষ করেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন বলেন, “খুঁজে বার করুন।” তাঁর এই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
এর পাশাপাশি তিনি প্রতিবারের মতো এবারেও নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করেন। তিনি বলেন, “নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। প্রতিটি সংস্থা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত। এখানে মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই আইনগতভাবে। নিয়োগকর্তাও মন্ত্রী নেই।” সাংবাদিকদের আরও একটি প্রশ্ন ছিল, সেটি হল – যদি দোষী প্রমাণিত হন তিনি তবে সেক্ষেত্রে শাস্তির বিষয়ে তাঁর কী মতামত থাকতে পারে? এই চাঞ্চল্যকর প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলেন “এক বছরে কিছু হল না…”। এক্ষেত্রে বলা যায়, এত বিপুল পরিমান টাকার আসল মালিক কে, তার সঠিক উত্তর আজও মেলেনি।
এইরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।