সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কোন কৌশলে বাজিমাত করল কংগ্রেস?

বাম-কংগ্রেস জোটেই আস্থা রাখল সাগরদিঘির মানুষ

হাইলাইটস:

•সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের বাজিমাত

•বিধানসভায় খাতা খুলল কংগ্রেস

•তৃণমূলের জেতা আসন ছিনিয়ে নিল কংগ্রেস

অতীতে সমগ্র মুর্শিদাবাদ জেলাকে কংগ্রেসের “গড়” বলা হত। গনি খান চৌধুরী থেকে অধীর রঞ্জন চৌধুরী, এনারা সবাই মুর্শিদাবাদ থেকেই কংগ্রেসের সর্বভারতীয় স্তরে উঠে এসেছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে পরাজিত করে বাংলার মসনদে বসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল-কংগ্রেস। ২০১১ সালের পর থেকে বাংলা জুড়ে শুধুমাত্র সবুজ ঝড়ই দেখেছে বাংলার মানুষ। আর ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিজয়রথকে একা হাতে থামিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর থেকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদী বিরোধী মুখ হিসাবে সর্বভারতীয় স্তরে উঠে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালে প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের তিনবারের বিধায়ক সুব্রত সাহা। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হিসেবে ২০১১ সালে সুব্রত সাহাই একমাত্র ভোটে জিতেছিলেন সাগরদিঘি থেকে। কিন্তু তাঁর অকাল প্রয়ানে পুনরায় উপনির্বাচন হয়েছে এই বিধানসভা কেন্দ্রে। বাম-কংগ্রেস জোট করে নির্বাচনে লড়াই করায় এ বার এই আসনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। তৃণমূলের তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম সমার্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন বাইরন বিশ্বাস এবং পদ্মশিবিরের প্রার্থী ছিলেন দিলীপ সাহা। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ৩টি বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জোড়াফুল ফুটেছিল। কিন্তু উপনির্বাচনের ফলাফল যে পাল্টে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল। প্রায় ২৩ হাজারের বেশি ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী জয়লাভ করেছে এই উপনির্বাচনে। সাগরদিঘিতে ৪৭.৩৫% ভোট পেয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল পেল ৩৪.৯৩% ভোট এবং বিজেপির ঝুলিতে ১৩.৯৪% ভোট।

তৃণমূলের বিজয়রথকে থামিয়ে দিলেন বাম সমার্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন বাইরন বিশ্বাস। প্রথম দফা ভোটের কাউন্টিং থেকেই তিনি এগিয়ে ছিলেন। রাজ্য বিধানসভায় কংগ্রেসের শূন্যতা কাটালেন বাইরন বিশ্বাস৷ কারণ তিনিই একমাত্র বিধায়ক যিনি কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করবেন বিধানসভায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল। তখন থেকেই বাংলায় কংগ্রেসের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ে। কিন্তু সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেসের এই ফলাফল আবারও প্রমাণ করে দিল রাজনীতির ময়দানে সবকিছুই হওয়া সম্ভব। তৃণমূল কংগ্রেসের নানা দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আসার পর উপনির্বাচনে এইরকম ফলাফল যথেষ্ট চাপে ফেলে দিয়েছে ঘাসফুল শিবিরকে।

কে এই বাইরন বিশ্বাস?

আদতে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বাসিন্দা বাইরন পেশায় হলেন একজন ব্যবসায়ী৷ বিড়ি, চা পাতার ব্যবসার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, নার্সিং হোমের মালিক তিনি৷ বাইরনের বাবা বাবর আলি বিশ্বাসেরও এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে৷ কারণ এলাকার দুঃস্থ এবং নিম্নবিত্ত মানুষকে দান-ধ্যানের জন্য সুনাম রয়েছে তাঁর৷ একে সংখ্যালঘু মুখ, তার উপর ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি, সেই কারণে সাগরদিঘিতে বাইরনকে বেছে নিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী৷ দলের অনেক নেতা দাবিদার থাকলেও অভিজ্ঞ রাজনীতিক অধীর রঞ্জন চৌধুরী বাইরনকেই টিকিট দিয়েছিলেন সাগরদিঘি উপনির্বাচনে৷ বাইরনের উপরে অধীরের অগাধ আস্থা প্রথম থেকেই ছিল৷ তাঁর বিশ্বাস ভোটে জিতে দল বদলে তৃণমূলে যাবেন না বাইরন৷ কারণ তিনি সৎ, মানুষের পাশে থাকেন৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সেই সিদ্ধান্তই মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে প্রমাণিত হল৷ ভোটে জিতে কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস বলেন, ‘মানুষেক অনেক ভালোবাসা পেয়ে আজকে আমি জয়ী হয়েছি। আমাকে জয়ী করার মানুষের যে ইচ্ছে ছিল, তা সফল হল। মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা পালন করব। ৩৬৫ দিন মানুষের সঙ্গে থাকব। সাগরদিঘিবাসীদের জন্য আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইল।’

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.