মনোমুদ্ধকর জঙ্গল ভ্রমণের স্বাদ পেতে শীতের দিনে চলে আসুন “ডুয়ার্স”

গা ছমছমে পরিবেশ! সে যেন এক অন্য অনুভূতি

শীতকালে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ভাবি পাহাড়ে যাব, তুষারপাত দেখবো। কিন্তু এই শীতে একটু জঙ্গল ভ্রমণের দিকে মন দিলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না। তাহলে কী পরিকল্পনা করছেন জঙ্গলে আসার? জঙ্গলের কথা এলেই আমাদের প্রথম মাথায় আসে ডুয়ার্স-এর কথা। অনেকেই আছেন যারা জঙ্গল ভালোবাসেন। শীতের ছুটিতে কোথায় যাবেন যদি এখনও ঠিক করে না ওঠেন তাহলে অবশ্যই ডুয়ার্স হতে পারে আপনার ট্রাভেল ডেস্টিনেশন। নদী, জঙ্গলে ঘেরা ডুয়ার্স সুন্দরী আপনাকে একটুও হতাশ হওয়ার সুযোগ দেবে না।

ডুয়ার্স হল জঙ্গল, বন্যপ্রাণী আর নদীর জীবন্ত ক্যালেন্ডার। দু’পা অন্তর মিলবে নদীর দেখা। জঙ্গলে কোথাও দিনেই অন্ধকার, আবার কোথাও সবুজ আলোয় মাখা। গরুমারা, চাপরামারি, জলদাপাড়া, খয়েরমারি অভয়ারণ্য আর তিস্তা, তোর্সা, মূর্তি, জলঢাকা নদী ও জয়ন্তী পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করুন। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, লেপার্ড, হাতি ও অন্যান্য জীবজন্তুকে কাছ থেকে দেখার অনন্য সুযোগ মিলবে এখানে। ডুর্য়াসের লাটাগুড়ি, চালসা চাপড়ামারি, চন্দ্রচূড়ের মতো জায়গা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

কী কী দেখবেন এখানে- 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ডুয়ার্সের আকর্ষণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে পর্যটন দফতর। ডুয়ার্সের ছোট-ছোট গ্রাম, চা বাগান আর সবুজে ভরা প্রকৃতিকে প্রাণভরে উপভোগ করার জন্য শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের পর্যটন ক্ষেত্রের বিশেষ প্রসার ঘটেছে গত কয়েক বছরে। ডুয়ার্স ও তরাই সংলগ্ন এলাকাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে পর্যটন দফতরের তরফ থেকে।

গরুমারা জাতীয় উদ্যান:

গরুমরা জাতীয় উদ্যানে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় গন্ডার রয়েছে। এটি প্রাণী এবং প্রকৃতি প্রেমীদের অন্বেষণের জন্য সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে কাজ করে। এটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং আপনার চোখকে প্রশান্ত করার জন্য সবুজ দৃশ্য দ্বারা বেষ্টিত।

চাপড়ামারি অভয়ারণ্য:

চাপড়ামারি মূলত গরুমারা জাতীয় উদ্যানের একটি সম্প্রসারণ, এটি আসলে মূর্তি নদী দ্বারা বিভক্ত। প্রকৃতপক্ষে চাপড়ামারি পশ্চিমে মূর্তি নদী এবং পূর্বে জলঢাকা নদী দ্বারা বেষ্টিত। যদিও এটি একটি অপেক্ষাকৃত ছোট বন (একটি এলাকায় প্রায় ১০ বর্গ কিমি) কিন্ত এটি ডুয়ার্সের প্রাচীনতম বনগুলির মধ্যে একটি।

বক্সা ব‍্যাঘ্র সংরক্ষণ:

ভুটান এবং আসামের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-পূর্ব কোণে সজ্জিত, বক্সা ব‍্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র যেটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৮৩ সালে এবং এটি দেশের ১৫ তম ব‍্যাঘ্র সংরক্ষণাগার। ৭৫৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই ব‍্যাঘ্র সংরক্ষণাগারটি বিভিন্ন নদী এবং তাদের উপনদী দ্বারা সেচ করা হয়। এটি একটি বৈচিত্র্যময় এবং শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যে বহন করে। প্রকৃতপক্ষে পাথুরে ভূখণ্ডের কারণে সিনচুলা রেঞ্জে অবস্থিত বক্সা পাহাড়ের বনের অনেক অংশ কর্তৃপক্ষের কাছেও দুর্গম এবং তাই এত বছর পরেও আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি।

ডুয়ার্সের রানি জয়ন্তী:

আলিপুরদুয়ার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বক্সা জঙ্গলের ধার ঘেঁষা জয়ন্তীকে বলা হয় “ডুয়ার্সের রানি”। ভারত-ভূটান সীমান্তবর্তী পাহাড়ে ঘেরা জয়ন্তী নদীর ধারে এককালে একটি গ্রাম ছিল বলে শোনা যায়। জয়ন্তী হল ডুয়ার্সের শেষ গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি, প্রায়শই “ডুয়ার্সের রানী” নামে অভিহিত করা হয়। এই স্বর্গীয় বনাঞ্চলটি বিখ্যাত বক্সা টাইগার রিজার্ভের কাছাকাছি। যদিও জয়ন্তী নদীটি সারা বছর বেশিরভাগ শুকনো থাকে, তবে সাদা নুড়ির তীরে স্থানটির চিরন্তন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

এছাড়া বলা যায়, জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে বেড়াতে গিয়ে হাতি সাফারি করেননি, এমন পর্যটক কমই আছেন। গরুমারা-লাগোয়া মূর্তি নদীতে হাতিরা দল বেঁধে জল খেতে আসে। ডুয়ার্সের টোটো জনজাতি এখন সর্বজনপরিচিত। বন্য জন্তু জানোয়ারদের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে সংগ্রাম করে এঁরা বেঁচে আছেন। তারা দরিদ্র, কিন্তু নির্ভীক, কর্মঠ এবং সৎ। মূল স্রোতে আসতে আগ্রহী, কিন্তু নিজেদের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ না করে। বর্তমানে সরকার থেকে এই জনজাতিগুলির জন্য নানা উন্নয়নের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। লেখাপড়ার বন্দোবস্ত করাও হয়েছে। ক্রমে এই জনজাতিগুলি উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে। মাদারিহাট হয়ে টোটোপাড়ায় পৌঁছতে হয়।

কোথায় থাকবেন-

এখানে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী হোটেল বা হোমস্টে পেয়ে যাবেন। বেশি বাজেট হলে আপনি বিলাসবহুল রিসোর্ট নিতে পারেন। আর কম বাজেট হলে লাটাগুড়িতে অনেক হোমস্টে পাবেন।

কীভাবে আসবেন-

ডুয়ার্স আসতে গেলে আপনি ট্রেন, ফ্লাইট অথবা বাস ব্যবহার করতে পারেন। আপনাকে হাওড়া থেকে মালবাজার বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন আসতে হবে অথবা ফ্লাইটে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট।

এইরকম ভ্রমণ সংক্রান্ত আপডেট পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজের সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.