জীবনের প্রথম বড়ো পরীক্ষা আর দেওয়া হল না! মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হল এক পরীক্ষার্থীর

ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জীবনের প্রথম বড়ো পরীক্ষা আর দেওয়া হল না এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হল ওই পরীক্ষার্থীর। গতকাল সকাল নটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার বৈকন্ঠপুর জঙ্গল সংলগ্ন টাকিমারি এলাকায়। এদিন বাবা বিষ্ণু দাসের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল অর্জুন দাস নামের ওই কিশোর। সেই সময় একটি হাতির সামনে পড়ে যায় বাবা ও ছেলে। পালানোর আগেই কিশোরকে পা পিষে দেয় হাতিটি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। তবে শেষ রক্ষা গয়নি। চিকিৎসকরা ওই ছাত্রকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌছায় পুলিশ ও বনকর্মীরা।

পুলিস সূত্রে খবর, পাচিরাম নাহাটা স্কুলের ছাত্র ছিল অর্জুন। মাধ্যমিকে কেবলপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলে তার সিট পড়েছিল। বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ছিল পরীক্ষাকেন্দ্রটি তাই সময় মতো পৌঁছতে হবে। তাই হাতে কিছুটা সময় নিয়ে বাইকে চড়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে রওনা হয় বাবা ও ছেলে। তারপরই তারা একটি হাতির মুখে পড়েন। কিশোরটির মৃত্যু হয় হাতির আক্রমণে। কোনক্রমে বেঁচে যান তার বাবা।

এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পা দাস জানান, আজ সকালে বাবা বিষ্ণু দাসের সঙ্গে বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গলের রাস্তা ধরেই অর্জুন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। জঙ্গলের রাস্তায় হাতিটি ছিল। মোটর বাইকে করে ছেলেকে নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন বিষ্ণু দাস। সেই সময় হঠাৎ করেই মোটর বাইকের সামনে চলে আসে হাতি। বাইক দেখেই হাতিটি তেড়ে আসে। মোটর বাইক ছেড়ে পালাতে যায় বাবা ছেলে। তবে বাবা পালাতে পারলেও অর্জুনকে ধরে ফেলে হাতিটি। সেখানেই শুড়ে তুলে আছড়ে মারে। এরপর পা দিয়ে পিষে মারে তাকে হাতিটি। দীর্ঘক্ষণ হাতিটি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে বলে জানা গিয়েছে। আশপাশ থেকে লোক এসেও হাতিকে তাড়াতে পারেনি। এরপর ট্র‍্যাক্টর নিয়ে তাড়ানো হয় হাতিটিকে। তারপর অর্জুনকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।”

এই বিষয়ে আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “অর্জুন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বিগত কয়েক মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমও করেছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষাটিই অর্জুন দিতে পারল না শুধুমাত্র বন দফতরের গাফিলতির কারনে। কয়েকদিন আগে যখন হাতিটি এলাকায় হামলা চালাচ্ছিল, সেই সময়েই যদি বন দফতর হাতিটিকে নিয়ে ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজ অর্জুন বেঁচে থাকত।”

উত্তরবঙ্গ সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার খবর শুনেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি জলপাইগুড়ির জেলাশাসক ও বন দফতরের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করেন। এর পরেই তিনি বলেন, ‘এর থেকে মর্মান্তিক ঘটনা আর নেই। আমি মর্মাহত। আমি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি, মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হয় তার সব ব্যবস্থা করতে।”

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৮ দফা গাইডলাইন প্রকাশ করে বন দফতর৷ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে বন্য হাতিসহ যে কোনও জন্তুর আক্রমণের মুখে যাতে পরীক্ষার্থীদের পড়তে না হয় তার জন্য বন সচিব বিবেক কুমার স্বাক্ষরিত নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন বাতিল করা হল বন দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকদের ছুটি। বোর্ড পরীক্ষা চলার সময়ে বন্য হাতি অথবা বন্য প্রাণীদের মুখোমুখি যাতে না হতে হয় ছাত্রছাত্রীদের তার জন্য বনদপ্তর সবরকম ব্যবস্থা নেবে। দপ্তরের আধিকারিকরা জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য কোন কোন এলাকা নিরাপদ নয় তা জানিয়ে মাইকিং করবে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণীদের যাতায়াতের রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে গেট বসিয়ে দেওয়া হবে। ‘‌ঐরাবত’‌ নামে বিশেষ ধরনের যান নিয়ে বন দপ্তরের আধিকারিকরা এলাকায় টহল দেবেন। স্পর্শকাতর এলাকায় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য জেলাশাসক, আঞ্চলিক পরিবহন আধিকারিক এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকদের মধ্যে সমন্বয় রেখে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে। মুখ্য প্রধান বনপাল এবং মুখ্য বন্য প্রাণী সহায়ক পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন নজর রাখবেন। সাধারণ মানুষ ও পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে কিনা। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ির ডিএম এবং গৌতম দেবকে ওই ছাত্রের বাড়ি পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো মৃত ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন গৌতম দেব, জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদরা সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.