আজ ডিএ ধর্মঘট! ফলে ধর্মঘট রুখতে কড়া নবান্ন

ধর্মঘট রুখতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন

হাইলাইটস:

•আজ শুক্রবার রাজ্যজুড়ে ডিএ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা

•ফলে রাজ্য সরকার ধর্মঘট রুখতে একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে

•আজ কতজন সরকারি কর্মচারী উপস্থিত তার নজর রাখবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী

কলকাতা: ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে আজ শুক্রবার প্রশাসনিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন। রাজ্য বিধানসভা বাজেটে ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে নারাজ সরকারি কর্মচারীরা। তাদের দাবি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বাড়াতে হবে। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনার চত্বরে ৪৩ দিন ধরে অবস্থানে চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের একাংশ। বৃহস্পতিবার ২৮ দিনে পড়েছে তাদের অনশন কর্মসূচি। এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে বিরোধীরা। এদিকে পঞ্চায়েত ভোটে সাধারণ মানুষ ও ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে নির্বাচন কমিশনকেও চিঠি দিচ্ছেন ডিএ-আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মীরা।

এইদিকে রাজ্যের সব সরকারি অফিসে ধর্মঘটে অনড় আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীরা। ডিএ ইস্যুতে ধর্মঘট ঘিরে সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২০ ও ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মচারীদের কর্ম বিরতির ডাকা নিয়ে নবান্নের তরফে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। ওই দুদিন অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটার পাশাপাশি সার্ভিস রুলে উল্লেখ করা হবে বলেও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। বকেয়া ডিএ-এর দাবিতে আন্দোলন রুখতে আরও কড়া রাজ্য সরকার। সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যেই হাজিরা রিপোর্ট পাঠাতে হবে। হাজিরা খতিয়ে দেখবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারই এই নির্দেশ পৌঁছে যায় বিভিন্ন দফতরের সচিবদের কাছে। আন্দোলন উপেক্ষা করে কতজন হাজিরা দিল সে নথি শুক্রবার দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী। কর্মীদের উপস্থিতির হার পাঠাতে হবে নির্দিষ্ট ফরম্যাটের মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই এই ফরম্যাট পৌঁছে গিয়েছে দফতরে দফতরে। সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যেই উপস্থিতির হার জানা যাবে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন দফতর। ধর্মঘট নিয়ে বৃহস্পতিবারই নবান্নর তরফে জারি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবারই ধর্মঘট নিয়ে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের অর্থ দফতর। আজ কোনও সরকারি কর্মচারী অনুপস্থিত থাকলে তাকে শোকজ করা হবে, সঙ্গে তার সার্ভিস ব্রেক হবে। এমনকি তার বেতনও কাটা যাবে। অনুপস্থিত থাকলে এবং শোকজের উত্তর যথাযথ না দিতে পারলে বিভাগীয় তদন্তের সম্মুখীন হতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে। তবে নবান্নের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের ছাড় দেওয়া হবে। কেউ যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন কিংবা কোনও কর্মচারী যদি আগাম ছুটি নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে, তার ছুটি মঞ্জুর হবে শুক্রবার। এছাড়া যদি কেউ বিনা অনুমতিতে শুক্রবার অনুপস্থিত থাকেন অফিসে, সেক্ষেত্রে তার বেতন কাটা যাবে তো হবেই, কর্মজীবনের মেয়াদও এক দিন কমবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

গতকাল ধর্মঘট নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন নবান্নের শীর্ষ মহল। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের পুলিশ কমিশনার সহ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরাও। নবান্ন সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে পুলিশকেও সব রকমের পদক্ষেপে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী। এই বৈঠক চলাকালীন নবান্নে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে নবান্নের তরফে রাজ্যের জেলাগুলিকেও বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। একই মর্মে কড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কলকাতা পুরসভাও।

বকেয়া ডিএ ইস্যুতে ধর্মঘটের সমর্থনে বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভায় মিছিল করেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ ও বাম প্রভাবিত পুর-কর্মচারী সংগঠন জয়েন্ট ফোরাম অফ ট্রেড ইউনিয়ন। মিছিল ফের পুরসভায় ঢুকতে গেলে মেন গেটে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। খাদ্য ভবনেও ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। আবার সেখানেই পাল্টা মিছিল করেন তৃণমূলপন্থী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের সদ্যরা। বিকাশ ভবন থেকে পূর্ত ভবন পর্যন্ত ধর্মঘটের বিরোধিতায় মিছিল করেন তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মীরা।

আবার যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের ১০ই মার্চের এই ধর্মঘটকে বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠন সমর্থন জানিয়ে একদিনের প্রতীকি ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে সময় রাজ্যজুড়ে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, ঠিক সেই সময় স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের এই ধরনের পদক্ষেপ ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে। নবান্নের তরফে কড়া নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও স্বাস্থ্যকর্মী ছুটি নিতে পারবেন না। এই সময়ে সিএল নিতে পারবেন না কেউই। সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ জারি থাকবে। অন্যথায় নবান্নের তরফে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তার পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে পরিবহন ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিন কয়েক পরেই রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। যাতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় কোনোরকম অসুবিধার সম্মুখীন না হতে হয়, সেই কারণে ইতিমধ্যেই শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীদের সমস্ত ছুটি বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী ছুটি নিতে পারবেন না। যদি একান্তই ছুটি নিতে হয়, উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে। তা না হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.