জমি বিতর্কের পর এবার নোবেল পুরস্কার নিয়ে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের পৈতৃক বাড়ি নিয়ে টানাপোড়েন চলেই আসছে কয়েকবছর ধরে

বিশ্বভারতীর জমি দখল নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ফের বিতর্কে জড়িয়েছেন। বেশ কয়েক বছর আগেও বিশ্বভারতীর তরফ থেকে এই একই অভিযোগ করা হয়েছিল। তখন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নাম না করে অমর্ত্য সেনকে ‘জমি চোর’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তারপরে শুরু হয়েছিল জোর বিতর্ক। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা। বিশ্বভারতী সূত্রের দাবি, বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জায়গা দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য সেন। ১৯৪৩ সালে অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। এই জমিতেই গড়ে উঠেছে অমর্ত্যবাবুদের পারিবারিক বাড়ি ‘প্রতীচী’। ২০০৬ সালে অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে জমির লিজ তার নামে হস্তান্তর করা হয়। বিশ্বভারতীর আরও দাবি, পাশাপাশি দু’টি লিজ দেওয়া জমির মধ্যবর্তী বিশ্বভারতীর নিজস্ব ১৩ ডেসিমেল জমিও ঢুকে রয়েছে ‘প্রতীচী’র সীমানার ভেতরে। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনের কাছে জমি ফেরত চেয়ে ফের একবার চিঠি দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার চিঠি দেওয়া হল নোবেলজয়ীকে। চিঠির বিষয়বস্তুতে, শান্তিনিকেতনের শ্রীপল্লীতে বিশ্বভারতীর থেকে লিজ নেওয়া ২০১ নম্বর প্লটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, “নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন বিশ্বভারতীয় মোট ১.৩৮ একর জমি ভোগ করছেন। এর মধ্যে আইনগতভাবে তাঁর জমির পরিমাণ ১.২৫ একর।” বাকি জমি তাঁকে দ্রুত ফেরত দিতে অনুরোধ করে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার চিঠি দিল কর্তৃপক্ষ।

গত ২৪শে জানুয়ারি অমর্ত্য সেনকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্বভারতী। শুক্রবারের দ্বিতীয় চিঠিতে সেকথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও চিঠির সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর দাবি, তিনি যে জমি ‘দখল’ করে রয়েছেন, তা একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানা গিয়েছিল। সেই সমীক্ষার কথাও শুক্রবারের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, তারা আমাকে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে অনেকগুলো মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া রয়েছে। এই ধরনের মিথ্যাচারের উত্তর দেওয়ার আগে, আমি পরীক্ষা করে দেখব যে তারা কীভাবে এই কথা বলছেন।” প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানিয়েছেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, “যদি আইনজীবী মনে করেন যে এই মিথ্যা অভিযোগের জবাব দেওয়া দরকার, তাহলে আমি আইনের দ্বারস্থ হব।”

সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতবিদকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি মন্তব্য করেন, “আমি ওনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু উনি নোবেল পুরস্কার পাননি, কিন্তু তিনি নিজেকে নোবেল প্রাইজ প্রাপক হিসেবে দাবি করেন।” তাঁর এই মন্তব্যের পর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার নোবেলজয়ী অর্থনীতবিদকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অর্থনীতিবিদ আদতে নোবেল পুরস্কার পাননি বলেও দাবি করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিশ্ববিদ্যালের উপাচার্য বলেন, ‘অমর্ত্য সেন জগত বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। আমি ওনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু উনি নোবেল পুরস্কার পাননি, কিন্তু তিনি নিজেকে নোবেল প্রাইজ প্রাপক হিসেবে দাবি করেন।’ তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য জুড়ে।

উপাচার্যের দাবি ছিল, “উনি নিজেকে নোবেল প্রাপক হিসেবে দাবি করেন বটে। কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি উনি। যে চুক্তি তৈরি হয়েছিল, তাতে পাঁচ জনকে নোবেল দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। ঠিক হয় নোবেল পাবেন পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, ঔষধবিদ, সাহিত্যিক এবং শান্তিবিদ। এর পর কেউ পাবেন না। পরবর্তী কালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এগিয়ে এসে বলে, পুরস্কারের টাকা তারা দেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেলে দেখেছেন, চেহারাও খোদাই করা আছে। কিন্তু অর্থনীতিতে যাঁরা নোবেল পান, তাতে লেখা হয় অ্যালফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে দেওয়া হল পুরস্কার।” অর্থাৎ সেটিকে নোবেল পুরস্কার বলা যাবে না বলে মত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। কিন্তু সারা দুনিয়া জুড়ে অমর্ত্য সেনের পরিচিতির যা ব্যাপ্তি, তাতে কোনও দিনই তাঁকে নিছক নোবেল পুরস্কারের আলোয় আলোকিত হতে হয়নি বলে মনে করেন বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে পড়াশোনার জগতের সঙ্গে জড়িত মানুষদের এক বড়ো অংশ। সুতরাং অমর্ত্য সেনের নোবেল-জয়কে কটাক্ষ করেন উপাচার্য যা বাংলার মানুষ ভালো চোখে নেন নি।

Sanjana Chakraborty

My name is Sanjana Chakraborty. I'm a content writer. Writing is my passion. I studied literature, so I love writing.

Leave a Reply

Your email address will not be published.