শিবরাত্রির উপবাসের পরে বেলের শরবত খান, আপনার শরীর সঞ্চয় করবে অনেক পুষ্টিগুন

শীতের শেষ ও গরমের শুরু এই সময় আবহাওয়ার পরিবর্তন খুব তাড়াতাড়ি প্রভাব ফেলে শরীরে। তার জেরে ছোট থেকে বড়ো প্রায় সকলেই নাজেহাল হন। এই সময়টায় খেতে পারেন বেল। এর রয়েছে হাজারও উপকারিতা। সেই প্রাচীন সময় থেকেই কিন্তু আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পাকাপক্ত জায়গা করে নিয়েছিল বেল। তাই বেল খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন। বেল একটি পুষ্টিকর আর উপকারী ফল। কাচা পাকা দুটোই সমান উপকারী।

সামনেই শিবরাত্রি আসছে। অন্যান্য ফল-মূলের পাশাপাশি বাজার মূলত ছেয়েচে হলুদ পাকা বেলে। বেল ছাড়া তো আর শিব ঠাকুরের পুজো হয় না। আর তারপর সেই বেলের ঠাণ্ডা শরবত প্রসাদ হিসেবে খাওয়া। কিন্তু অনেকেই এমন আছেন যারা বেল ছুঁয়েই দেখেন না। তাদের এর স্বাদ খুব একটা ভালো লাগে না। তবে এমন করলে কিন্তু হবে না। এই গরমের সময়ে বেল খাওয়া খুবই দরকার। শরীর ঠিক রাখতে এটি অনবদ্য কাজ দেয়। শিবরাত্রিতে সারাদিন উপবাসের পর বেলের শরবত খেতে বলা হয়। পুষ্টিবিদরাও এই মরসুমে শরীর ঠান্ডা রাখতে নানা রকমের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দেন।

পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিচার করলে বেল অনন্য। এর মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান তো আছেই, তাছাড়াও আরও অনেক পুষ্টিগুণ আছে। এতে থাকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন A ও C, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম। তার মানে বুঝতেই পারছেন কত দিক থেকে বেল পুষ্টিকর আপনার স্বাস্থ্যের জন্য। শিবরাত্রির পর থেকে গরম বাড়তে শুরু করে তাই শরীর ঠান্ডা রাখতে বেলের শরবত খুবই উপকারী।

বেলের উপকারিতাগুলি দেখে নিন: 

•পুষ্টিবিদদের মতে, বেলের শরবতে বিটা ক্যারোটিন, প্রোটিন, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন C, ভিটামিন B এবং B2, থায়ামিন, নিয়াসিন, ক্যারোটিন, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফাইবার জাতীয় পুষ্টি পাওয়া যায়। তাই উপবাস করার পর বদহজম বা পেট ব্যথা হলে এই শরবত খেলে মুক্তি পেতে পারেন।

•আপনার আলসার যদি দীর্ঘ দিনের হয় তাহলে তো ডাক্তার দেখাতেই হবে, ওষুধ খেতেই হবে। কিন্তু তার সঙ্গে বেল খাওয়াও কিন্তু খুব দরকার। পাকা বেলের শাঁসে সেই ফাইবার আছে যা আলসার উপশমে সাহায্য করে। সপ্তাহে তিন দিন বেলের শরবত করে খান আলসার কমাতে। এছাড়া বেলের পাতা সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই জল খেলেও কিন্তু অনেক কমে যায় আলসার।

•গরমের সময় অনেকেরই পেটের সমস্যা হয়। বেল আমাশয় অবস্থাতে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আমাদের পেট শীতল রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাসের সমস্যা হয় না বেল খেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেলের কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই। এই ফল শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি দূর করে শরীর ডিটক্স করে।

•পাকা বেলে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান, যা যক্ষ্মা কমাতে সাহায্য করে। তবে ভালো ফল পেতে আপনাকে ব্রাউন সুগারের সঙ্গে বা মধু দিয়ে বেলের শরবত করে রাতে খেতে হবে ঘুমোতে যাওয়ার আগে। এটি টানা চল্লিশ দিন খান। উপকার পেতে আপনি বাধ্য।

•পাকা বেলে আছে মেথানল নামের একটি উপাদান যা ব্লাড সুগার কমাতে অনবদ্য কাজ দেয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় এটি ধরা পড়েছে। তবে ভালো ফল পেতে পাকা বেল শরবত করে নয়, এমনিই খেতে হবে।

•ক্যান্সারকে আজকের দিনের সবচেয়ে ভয়ানক মহামারী বলা যায়। আমরা সবাই চাই এই রোগটি থেকে দূরে থাকতে। বেল কিন্তু আমাদের এই রোগ থেকে দূরে রাখে। এতে আছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। এই উপাদান টিউমার হতে দেয় না সহজে। আর যেহেতু এই ফলে হাই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আছে তাই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

•আমাদের শরীরের প্রধান উপাদানই তো রক্ত। রক্তের মাধ্যমেই পুষ্টিগুণ সব অংশে পরিবাহিত হয়। তাই রক্তের শুদ্ধ থাকাটা খুব দরকার। বেল এই রক্ত শুদ্ধ করতে খুব ভালো কাজ দেয়। খানিকটা পাকা বেলের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেলে এটি রক্ত শুদ্ধ করে। ট্যান দূর করে। শুধু রক্ত নয়, কিডনি ও লিভারের কাজও ঠিক করে।

বেলের শরবত বানানোর পদ্ধতি:

•বেল ১টি

•জল ৪ কাপ

•দুধ বা দই ১/২ কাপ

•চিনি পরিমানমতো

প্রণালী:

•যেদিন শরবত তৈরি করবেন তার আগের রাত দিয়ে বেলটি ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখুন।

•তারপর জল থেকে তুলে বেলের আঠা ও বীজ ফেলে দিন।

•এরপর বেলের মধ্যেকার শাঁস চটকে নিয়ে ছেঁকে নিন।

•এবার তাতে চিনি ও জল মিশিয়ে ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করুন।

•তারপর ওই মিশ্রণে দই, অল্প জল এবং চিনির পরিমান কম থাকলে আরও একটু চিনি দিয়ে মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে মিক্সড করে নিন।

•মিশ্রণটি সুন্দর করে উপভোগ করতে উপর থেকে কয়েকটি বরফের টুকরো ফেলে দিন। আপনার শিবরাত্রির উপবাসের জন্য কার্যকরী খাবার বেলের শরবত প্রস্তুত।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.