রাজ্যপালের প্রধান সচিব আইএএস অফিসার নন্দিনী চক্রবর্তীকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করা হল

এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে

সূত্রের খবর, রাজ্যপালের প্রধান সচিব আইএএস অফিসার নন্দিনী চক্রবর্তীকে তাঁর পদ থেকে সরানো হল। রবিবার রাতেই এই খবর সামনে এসেছে। যদিও রবিবার রাত পর্যন্ত রাজভবন ও নবান্নের তরফে এই নিয়ে লিখিত কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। ফলে, তেমনটা হলে নন্দিনীর জায়গায় নতুন প্রধান সচিব কে হবেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। বাংলার স্থায়ী রাজ্যপাল পদে সিভি আনন্দ বোসের পূর্বসুরি জগদীপ ধনখড়ের সময়ে সুনীলকুমার গুপ্তা ছিলেন রাজ্যপালের প্রধান সচিব। ধনখড় দেশের উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে তাঁকে দিল্লিতে উপরাষ্ট্রপতির সচিব হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর থেকেই রাজ্যপালের প্রধান সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৪ ব্যাচের আইএএস অফিসার নন্দিনীকে। তখন লা গণেশন ছিলেন অস্থায়ী রাজ্যপাল। সিভি আনন্দ বোস স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে নন্দিনীই এতদিন রাজ্যপালের প্রধান সচিব পদে ছিলেন। গত বেশ কিছু দিন ধরে সিভি আনন্দ বোসের বক্তব্য নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।

শোনা যাচ্ছে, রাজ্যপাল তাঁর নিজের পছন্দমত টিম নতুন করে তৈরি করতে চাইছেন। নন্দিনী চক্রবর্তীর বদলে নতুন কাউকে প্রধান সচিব হিসেবে সরকারের কাছ থেকে চাওয়া হবে। সূত্রের আরও দাবি, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ইচ্ছাতেই সরানো হচ্ছে তাঁর প্রধান সচিবকে। সিভি আনন্দ বোসের আগে পূর্ণ সময়ের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যের সংঘাত দেখা গিয়েছিল অতীতে। কখনও কখনও রাজ্য-রাজভবন তরজা চরমেও পৌঁছেছে। তবে জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতির ভোটে লড়ার জন্য রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দিতেই সাময়িক সময়ের জন্য এই পদে আসেন লা গণেশন। তাঁর সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো ছিল। এরপর রাজ্যপালের দায়িত্ব নেন সিভি আনন্দ বোস। তাঁর শপথ অনুষ্ঠান থেকেই রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্কের আভাস মিলেছিল। এরপর সময় যত এগিয়েছে, সে সম্পর্ক নজরে পড়েছে। এ নিয়ে বিজেপির বিস্তর অভিযোগও ছিল। কখনও সরাসরি, কখনও ঘুরিয়ে সে কথা বলেছেন বঙ্গের বিজেপি নেতারা।

রাজনৈতিক মহলের একটা বড়ো অংশ বলছে, রাজ্যপাল হিসাবে সিভি আনন্দ বোস রাজ্যে আসার পর থেকেই নন্দিনীকে নিয়ে বিজেপির মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এমনকী রাজ্যপালের হাতে খড়ির সময়ও গেরুয়া শিবিরের দাবি ছিল, প্রধান সচিবের পরামর্শেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। আর এভাবে কী শেষমেশ বিজেপির চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেন রাজ্যপাল? সেই প্রশ্নও তুলছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ। এ রাজ্যে রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্যপালের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাত চরম আকার নেয়। এরপর অস্থায়ী রাজ্যপাল হন লা গণেশন। তাঁর সঙ্গে সরকারের যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল।

সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গেও রাজ্য প্রশাসনের সম্পর্কের রসায়ন বেশ ভালো। সম্প্রতি সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ্যপাল। সে সময় বিজেপি নেতারা বলেছিলেন, ধীরে ধীরে ভুল ভাঙবে। তাঁদের বক্তব্য ছিল রাজ্যপালকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। বিধানসভার অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণের সময় বিজেপি বিধায়কদের শোরগোল নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়। তবে তাল কাটে শনিবার। রাজভবনে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সুকান্ত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, রাজ্যপাল তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, কোনও দুর্নীতি ও হিংসা মান্যতা পাবে না। অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ ছিল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। এবার রাতের অন্ধকারে তাঁকেই সরিয়ে দিল রাজভবন। সুতরাং বলা যায়, রাজ্যপালের প্রধান সচিব আইএএস অফিসার নন্দিনী চক্রবর্তীর অপসারিত হওয়া খবরে নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.