বয়ানে অসঙ্গতির ফলে রাজধানীতে ইডির হাতে গ্রেপ্তার অনুব্রত মণ্ডলের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি

আজ জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল অনুব্রত কন্যা সুকন্যাকেও

হাইলাইটস:

•দিল্লিতে গ্রেপ্তার হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি

•মেয়ে সুকন্যাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লি ডেকে পাঠিয়েছে ইডি

•অনুব্রত মণ্ডলের সমস্ত বেআইনি লেনদেনের উৎস কোথা থেকে তা জানেন মণীশ কোঠারি এমনই আশঙ্কা করছেন ইডি আধিকারিকরা

নয়াদিল্লি: গতকাল দিল্লিতে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় শুরু হয় জেরা এবং চলে রাত ৮ টা পর্যন্ত। প্রায় ৯ ঘন্টা ‘ম্যারাথন’ জেরায় বয়ানে অসঙ্গতির ফলে দিল্লিতে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার অনুব্রতর মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, অনুব্রত এবং তাঁর স্ত্রী ও কন্যা সহ তাঁদের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি এলো কোথা থেকে? একাধিক রাইল মিল ও কোটি কোটি টাকার যে লেনদেন হয়েছে, সে সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয় মণীশকে। তারপরই তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। এর আগে গত নভেম্বরেও মণীশকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি।

এদিকে আজ বুধবার দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে। সূত্রের খবর, মণীশের মতোই এদিন বাবা অনুব্রতর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার কথা ছিল সুকন্যাকে। সুকন্যার নামে রয়েছে একাধিক জমির দলিল, রয়েছে রাইস মিল। রয়েছে তিন কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিটও। একজন সাধারণ শিক্ষিকা হয়ে কোটি কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট বা মিলের জন্য কোথা থেকে টাকা এল? কোথা থেকে তিনি এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন? সূত্রের খবর, নথি দেখিয়ে তাঁর কাছে এই সব জানতে চাইত ইডি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ইডি হাজিরা এড়ালেন অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা। বুধবার বেলা ১১ টার মধ্যে দিল্লিতে ইডির সদর দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তিনি যাচ্ছেন না বলেই খবর। এদিকে বুধবার দুপুর ২ টোয় রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে তোলা হবে মণীশ কোঠারিকে।

গরু পাচার মামলায় গত বছর অনুব্রত গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে ছিলেন কোঠারি। এর আগেও মণীশ কোঠারি ও সুকন্যাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন ED-র গোয়েন্দারা। অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পরেই ফের তলব করা হয় মণীশ কোঠারি সহ ১২ জনকে। সেই ১২ জনের তালিকার প্রথমে নাম ছিল মণীশ কোঠারির। অনুব্রতর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার পরিকল্পনা ছিল ইডির। নির্দেশ মতো মঙ্গলবার দিল্লিতে ইডি দপ্তরে যান কোঠারি। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর কোঠারিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কিন্তু কে এই মণীশ কোঠারি?

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে মণীশ কোঠারি জানিয়েছিলেন, তিনি একজন চার্টাড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, তিনি যা যা করেছেন সব অনুব্রত মণ্ডলের কথাতেই করেছেন। অন্যদিকে, অনুব্রতর দাবি, তিনি এই সব বিষয়ে কিছুই জানেন না। ইডির দাবি, জেরার মুখে অনুব্রত বারবার বলে এসেছেন, টাকা, সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে যা জানার, তা তাঁর অ্যাকাউন্ট্যান্ট বলতে পারবেন। সুকন্যা মণ্ডলও একই কথা বলেছেন।

প্রাথমিকভাবে বলা যায়, তিনি ছিলেন অনুব্রত মন্ডলের হিসেবরক্ষক। তবে তার বাইরেও অজস্র কাজ ছিল তাঁর। জানা গিয়েছে ২০১১ সালের পর থেকে মণীশ কোঠারির প্রতিপত্তি বেড়েছে ঝড়ের গতিতে। আবার অনেকের মতে, অনুব্রতর সম্পত্তি সামাল দিয়েই এই প্রতিপত্তির মালিক হয়েছেন মণীশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, অনুব্রত ও সুকন্যা মণ্ডল ছাড়াও বীরভূমের বহু বড় ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টের দায়িত্ব ছিল মণীশের কাঁধে। বাড়ি বোলপুর শ্রীনিকেতন রোডে। বীরভূম শুধু নয়, বীরভূমের বাইরে বিপুল জমি কেনা হয়েছে, সুকন্যা মণ্ডলের নামে ১৭ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। ওইসব তথ্য জানতে চাইছে ইডি। গরু পাচারের টাকা বিনিয়োগের হাল হকিকত সব জানতেন মণীশ কোঠারি।

মূলত তাঁর হাতেই ছিল অনুব্রত ও সুকন্যার বিপুল সম্পত্তির চাবিকাঠি। কালো টাকা কোন পথে সাদা করা হবে, সে হিসেব নাকি কষতেন তিনি। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অনুব্রতর একাধিক লেনদেন ও সম্পত্তির নথি উদ্ধার হয়েছে। ইডি সূত্রে আরও জানা যায়, গরু পাচার চক্রের কোটি কোটি কালো টাকা কীভাবে সাদা করা যায় তার সমস্ত সুলুক সন্ধান অনুব্রতকে দিয়েছিলেন মণীশই। আরও বেশ কয়েকটি ভুয়ো কোম্পানি রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের সেগুলিও পরিচালনা করতেন তিনি। মূলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে কোটি কোটি টাকা সাদা করার একটি বেআইনি চক্র চলত সমগ্র বাংলা জুড়ে।

অনুব্রতর সাম্রাজ্যের আর্থিক দিকটাই কার্যত দেখভাল করতেন তিনি। এইসব বেআইনি লেনদেন, কালো টাকার উৎস জানতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইডির তরফে। এবার দেখা যাক গরু পাচার মামলা কোন দিকে মোড় নেয়।

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদন পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.