পিরিয়ডের ব্যথার জন্য আয়ুর্বেদিক প্রতিকার: ১১টি জিনিস যা আপনি সহজেই বাড়িতে চেষ্টা করতে পারেন

আদা থেকে ডার্ক চকোলেট, পিরিয়ডের ব্যথার আয়ুর্বেদিক প্রতিকার

ঋতুচক্রের সময় ঋতুস্রাবকারীদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রতিটি ঋতুস্রাবের সময়কাল আলাদা হয়, কিছু ব্যথাহীন আবার কেউ কেউ এই সময়ের মধ্যে তীব্র ব্যথা এবং বমি বমি ভাব অনুভব করে। এই পর্যায়টি শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যাই নয়, এটি মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি করে। পিরিয়ড যা সাধারণত পাঁচ দিন স্থায়ী হয়, কিছু মহিলাদের জন্য এটি বেদনাদায়ক এবং অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। একটি স্বাভাবিক পিরিয়ড চক্র ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পড়ে এবং রক্তপাত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ঋতুস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার আয়ুর্বেদিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়। এগুলিরও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মহিলারা পেটে ব্যথা, খিঁচুনি, মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা, উরুতে ব্যথা, কম বা বেশি রক্তপাত, অনিয়মিত মাসিকের মতো অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এখানে পিরিয়ডের ব্যথার জন্য আয়ুর্বেদিক প্রতিকারের একটি তালিকা রয়েছে যা আপনি ব্যথা প্রশমিত করার চেষ্টা করতে পারেন।

১. পিরিয়ড ক্র্যাম্প উপশম করতে:

আপনি যদি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই ভেজানো কিশমিশ এবং জাফরান ব্যবহার করতে হবে। এটি সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এটি পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি এবং এটি বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। কালো কিশমিশ ব্যবহার করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

২. আদা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে:

এই ক্ষেত্রে আদার বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই পিরিয়ডের সময় আদা খাওয়া উপকারী হতে পারে। আদার ছোট ছোট টুকরো জলেতে ফুটিয়ে পান করলে শরীরের ব্যথা ও ক্র্যাম্পের সমস্যা দূর হয়।

৩. ডার্ক চকলেট ব্যথা উপশম করবে:

পিরিয়ডের সময় ডার্ক চকলেট খাওয়া খুবই উপকারী এবং আরামদায়ক। এটি ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ। এতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান পিরিয়ড ক্র্যাম্প দূর করতেও সহায়ক।

৪. পিরিয়ডের অনিয়মিততা শেষ হবে:

দশং হল একটি সুগন্ধযুক্ত আয়ুর্বেদিক ওষুধ যা চন্দন, জটামানসি এবং অন্যান্য অনেক সুগন্ধযুক্ত ভেষজ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এটি মানসিক চাপ কমায় এবং পিরিয়ড দেরীতে হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও অশোক, অ্যাসপারাগাস এবং লোধরার মতো আয়ুর্বেদিক প্রতিকারগুলিও মাসিকের বিলম্ব কমাতে পারে। একই সঙ্গে মলকাগ্নি, জ্যোতিষমতি, ব্রাহ্মী, শতবরী, অশ্বগন্ধাও উপকারী বলে প্রমাণিত হয়।

৫. হিং ব্যবহার করুন:

অনেক মহিলাই পিরিয়ডের সময় গ্যাস এবং অ্যাসিডিটির সমস্যায় পড়েন। এমন অবস্থায় এক চিমটে হিং জলের সঙ্গে গিলে খেয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়। গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৬. মৌরি জল পান করুন:

মৌরি মাসিকের জন্য একটি কার্যকরী ভেষজ। এটি মাসিকের ব্যথা উপশম করে। এক গ্লাস জলে মৌরি সিদ্ধ করে ফিল্টার করে এই জল নিয়মিত পান করুন। পেটের ব্যথা ও খিঁচুনিতে উপশম হবে।

৭. তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন:

যেসব ঋতুস্রাবের প্রথম থেকেই মাসিকের ক্র্যাম্পের সমস্যা রয়েছে তারা তিলের তেল দিয়ে তলপেটে মালিশ করতে পারেন।

৮. চিনি এবং মিষ্টি থেকে দূরে থাকুন:

মাসিকের ব্যথা এবং ক্র্যাম্প এড়াতে সম্ভব হলে চিনি এবং মিষ্টি থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।

৯. তিলের তেলে খাবার রান্না করুন:

আপনি যদি প্রতি মাসে খিঁচুনি এবং ব্যথা অনুভব করেন তবে শুধুমাত্র তিলের তেলে খাবার রান্না করুন। এটিতে প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি লিনোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ।

১০. হলুদ এবং জায়ফল:

হলুদের উচ্চ প্রদাহ বিরোধী এবং নিরাময় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর জায়ফল একটি স্পাসমোডিক মশলার সংমিশ্রণ। যদি এই দুটি একসাথে ব্যবহার করা হয় তবে পিরিয়ডের ব্যথার জন্য বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। একটু হলুদ ও জায়ফল গরম বাদাম দুধ বা ঘুমানোর আগে নিয়মিত দুধের সাথে খেলে ভালো ঘুম হয়। এটি আপনার জন্য একটি খুব স্বাস্থ্যকর বিকল্প।

১১. সেলারি:

পিরিয়ডের সময় মহিলাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়, যার কারণে পেটে প্রচণ্ড ব্যথাও হয়। এটি মোকাবেলায় সেলারি খাওয়া খুবই কার্যকর। আধা চা-চামচ জোয়ান এবং আধা চা-চামচ লবণ একসাথে কুসুম গরম জলে মিশিয়ে পান করলে তাৎক্ষণিক ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও পিরিয়ডের সময় বীটরুট, গাজর এবং শসার রস দিয়ে আজওয়াইন পান করলেও ব্যথা থেকে কিছুটা উপশম পাওয়া যায়।

উপরের আয়ুর্বেদিক প্রক্রিয়াগুলি বাড়িতে চেষ্টা করুন পিরিয়ডের ব্যথা থেকে উপশম পেতে।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.