পর পর ভূমিকম্পের জেরে কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে তুরস্ক

তুরস্কের ছায়া সিরিয়াতেও

ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের তুরস্ক যেন মৃত্যুপুরী৷ পাল্লা দিয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে সিরিয়াতেও৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ট থেকে ১৮ কিলোমিটার গভীরে এই কম্পনের উৎসস্থল ছিল৷ গতকাল স্থানীয় সময় ভোর ৪টে ১৭ মিনিটে প্রথমবার তুরস্কে কম্পন অনুভূত হয়৷ রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৯৷ ১০ মিনিট পরেই আফটারশক। দ্বিতীয়বার কম্পনের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। ভোররাতে ভূমিকম্প হওয়ায় ঘুমের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে যান অসংখ্য মানুষ৷ গাজিয়ানটেপ শহরে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বাস৷ প্রায় গোটা শহরটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ এর পরে একাধিকবার জোরালো কম্পনে গতকাল কেঁপে উঠেছে তুরস্ক৷ লেবানন, গ্রিনল্যান্ড, গ্রিস, সাইপ্রাস সহ বিভিন্ন দেশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে৷

এই দুই দেশ মিলে এই ভূমিকম্পে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মানুষের। তুরস্কের সরকার জানিয়েছে, প্রায় ২৩৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে ভূমিকম্পে। আহত কমপক্ষে প্রায় ১৪৪৮৩ জন। অন্যদিকে সিরিয়া সরকার জানিয়েছে, সিরিয়ায় প্রায় ১৪৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এই বিপর্যয়ে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। দুই দেশ মিলিয়ে এই ভূমিকম্পে প্রচুর মানুষ নিখোঁজ। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ সিরিয়ার সব অংশে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। গৃহযুদ্ধের আগুন এখনও থামেনি এই দেশে। দেশের উত্তর অংশের নিয়ন্ত্রণ এখনও বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে। ফলে ভূমিকম্পে সেখানে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং মৃত-আহতদের সঠিক পরিসংখ্যান, কিছুই জানা যায়নি সেই এলাকাগুলি থেকে। তবে জানা গিয়েছে, সিরিয়ার উত্তর অংশেও ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

ভূমিকম্পে ক্রমেই কঠিন পরিস্থিতি হচ্ছে তুরস্ক – সিরিয়ায়। প্রবল এই ভূমিকম্পে তুরস্কে ভেঙে পড়েছে একাধিক বাড়ি, বহুতল। কংক্রিটের চাঙড় সরাতেই বেরিয়ে পড়ছে একের পর এক দেহ। রাস্তায় আশেপাশে জমেছে বহুতলের ধ্বংসস্তূপ। সেখানে পরিজনকে ফিরে পাওয়ার আশায় ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। মাত্র একদিনের মধ্যে চেনা ছবি কার্যত বদলে গিয়েছে তুরস্ক এবং সিরিয়াতে। ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকেই এই দুই দেশ থেকে আসছে একের পর এক বিপর্যয়ের খবর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু-এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই ভূমিকম্পে অন্তত ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। অর্থাৎ মৃত্যু মিছিল আরও বাড়তে পারে। সবথেকে চিন্তার বিষয় ভূমিকম্পের পরে একের পর এক আফটারশকে কেঁপে উঠছে সিরিয়া এবং তুরস্কের বিস্তীর্ণ এলাকা। তার জেরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সোমবার ভূমিকম্পের পরে অন্তত ১০০টি আফটারশক এসেছে।

১৯৯৯ সালে এমনই এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক৷ সেই বার মৃতের সংখ্যা ১৭ হাজার ছুঁয়েছিল৷ এবারের বিপর্যয়ে শেষ পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার৷ ধ্বংসস্তূপের নীচে কত মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন, এখনও তার হিসেব নেই৷ ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে, এমন আশঙ্কা প্রবল৷

তুরস্কের এই বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নেদারল্যান্ড, রোমানিয়া,স্পেন, পোল্যান্ডের মতো ইউরোপের দেশগুলি৷ ধ্বংসস্তূপের নীচে জীবিতদের চিহ্নিত করতে কোপারনিকাস স্যাটেলাইট ম্যাপিং সার্ভিসের মাধ্যমে তুরস্ককে সহযোগিতা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ শোকপ্রকাশ করে যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও৷ ভারত থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’টি দল তুরস্কে যাচ্ছে৷ বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাজিয়াবাদ থেকে এনডিআরএফ-কে পাঠানো হয়েছে তুরস্কে। তার সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী৷ উদ্ধারকারী দল তৈরি রেখেছে তাইওয়ানও৷ এদিকে, সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করলেন তুর্কির প্রেসিডেন্ট তাইয়িপ এরদোগান। উদ্বিগ্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ফোন করেন তিনি। এরই মধ্যে উদ্ধারকাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তীব্র ঠান্ডা। কিন্তু প্রবল ঠান্ডার মধ্যে প্রত্যাশিত গতিতে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। মনে করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলতে পারে।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.