কড়া নিরাপত্তায় ত্রিপুরায় শুরু ভোটগ্রহণ! প্রত্যাবর্তন নাকি ফের পালাবদল তা জানা যাবে আগামী ২রা মার্চ

আজ ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন

আগরতলা: কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই আজ ত্রিপুরার বিধানসভা হাইভোল্টেজ নির্বাচন। সকাল ৭টা থেকেই ত্রিপুরায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে৷ ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে বিকেল ৪টে পর্যন্ত৷ রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে চলছে ভোটগ্রহণ৷ গত ২০১৮ সাল থেকে রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে তীব্র আলোচিত ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। পাঁচ বছর পর ফের ভোট যুদ্ধ ১৬ই ফেব্রুয়ারি। এবার ত্রিপুরার নির্বাচনে অবশ্যই সবার নজর রয়েছে বাম-কংগ্রেসের অঘোষিত জোট এবং তিপরা মোথার দিকে৷ বিজেপি-র প্রত্যাবর্তন নাকি ফের পালাবদল, এই সিদ্ধান্ত নেবেন ত্রিপুরার ২৮ লক্ষ ভোটার৷ ফলাফল জানা যাবে ২রা মার্চ ভোটের ফল ঘোষণার দিন। আজ ত্রিপুরার সাথে সাথে মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ড নির্বাচনেরও ফল ঘোষণা৷ যদিও উত্তর পূর্বের এই দুই রাজ্যে ভোট গ্রহণ হবে ২৭ই ফেব্রুয়ারি৷

সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যে মোট ৩ হাজার ৩৩৭টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে৷ যার মধ্যে ১১০০ কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর এবং ২৮টিকে অতি স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷ অশান্তি এড়াতে রাজ্যের সর্বত্রই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে৷ নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৩১ হাজার জওয়ান এবং রাজ্য পুলিশের ২৫ হাজার কর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ কমিশনের তরফে বারবার শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করানোর কথা বলা হলেও একের পর এক রাজনৈতিক হামলা পাল্টা হামলার জেরে পরিস্থিতি গরম। ইতিমধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছে বাম-কংগ্রেস জোট ও তৃণমূল।

ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটে এবার শাসক দল বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জ বাম-কংগ্রেসের জোট। তবে এবার ত্রিপুরার নির্বাচনে অবশ্যই সবার নজর রয়েছে বাম-কংগ্রেসের অঘোষিত জোট এবং তিপরা মোথার দিকে৷ সরাসরি জোট না বাঁধলেও বিজেপি-কে রুখতে আসন সমঝোতার পথে হেঁটেছে বাম এবং কংগ্রেস৷ সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থী দিয়েছে ৪৭টি এবং ১৩টি আসনে। পশ্চিমবঙ্গে ব্যর্থ হওয়ার পর ত্রিপুরায় তাদের এই কৌশল ফলপ্রসূ হয় কি না, সেদিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল৷ আবার পৃথক রাজ্য গ্রেটার তিপরাল্যান্ড গঠনের দাবিতে সরব হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদিবাসীদের সমর্থন পুষ্ট তিপরা মোথা শেষ পর্যন্ত বিজেপি-কে কতটা বেগ দেয়, সেটাও দেখার বিষয়৷ কারণ ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য প্রদ্যোৎ মাণিক্যর দল ৪২টি আসনে লড়ছে৷

আদিবাসীরা ত্রিপুরার নির্বাচনে অন্যতম বড় ফ্যাক্টর৷ রাজ্যের ৬০টি আসনের এক তৃতীয়াংশই আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত৷ গত নির্বাচনে আদিবাসী ভোট টানতে আইপিএফটি-র সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বিজেপি৷ মাঝে সংঘাতের পর এবারেও দুই দল জোট বেঁধেই লড়ছে৷ তবে তিপরা মোথার উত্থানে অনেকটাই কোণঠাসা আইপিএফটি৷ এবারের নির্বাচনে মাত্র ৬টি আসনে লড়ছে তারা৷ বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৫৫টি আসনে৷ একটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে দুই দলের৷

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, ত্রিপুরার ২৮টি আসনে লড়ছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ প্রথমে ক্ষমতা দখলের কথা বললেও নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বিচার করে শেষ পর্যন্ত ২৮টি আসনেই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল৷ লক্ষ্য ত্রিপুরায় নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করা৷ গোয়ায় ব্যর্থতার পর ত্রিপুরায় তৃণমূল কেমন ফল করে, সেই দিকেও তাকিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গবাসী।

ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনৈতিক আঙিনায় বহুকাল ধরে কংগ্রেস বনাম বামেদের লড়াই দেখা গিয়েছে। পরবর্তীকালে বিজেপি সেখানে বামেদের হারিয়ে ক্ষমতায় আসে। তবে এসবেরই মাঝে ত্রিপুরার রাজবংশের সন্তান তথা রাজ্যের প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান প্রদ্যোৎ দেববর্মার পার্টি তিপরা মোথা পার্টি এই রাজনৈতিক আঙিনায় অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা লড়ছেন টাউন বরদৌলি কেন্দ্র থেকে৷ আগরতলায়,ভোট দানের পর বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, “বিজেপি এবার আবার সরকার গঠন করতে চলেছে। ভোটপর্ব ঘিরে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।” এক বছর আগে বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী করার যে সিদ্ধান্ত বিজেপি নিয়েছিল, তা সঠিক না ভুল, এই নির্বাচন সেই প্রশ্নেরও উত্তর দেবে৷

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরার নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সিপিআই(এম), কংগ্রেস এবং তিপরা মোথা পার্টির ত্রিমুখী লড়াই থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.