এই বছর মহা শিবরাত্রি কবে পড়েছে, ১৮ না ১৯শে ফেব্রুয়ারি? জেনে নিন শুভক্ষণ ও চার প্রহরের পুজোর সময়

শিবরাত্রি হল আসলে শিব চতুর্দশী

শিব ভক্তদের কাছে মহা শিবরাত্রির দিনটি কোনও উৎসবের চেয়ে কম নয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে বিখ্যাত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের আবির্ভাবও হয়েছিল। শিবরাত্রি তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ হিন্দুধর্মশাস্ত্রে। শাস্ত্রে বলা হয়, শিবরাত্রি হল আসলে শিব-পার্বতীর বিবাহতিথি। এই দিনটি আসলে পুরুষ ও প্রকৃতির মিলনদিন। জীবনের অন্ধকারকে জয় করে প্রজ্ঞা ও চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করার দিন এটি। শিবপুজোর বহিরঙ্গের মাধ্যমে একটা সুউচ্চ দর্শনের সাধনাই দিনটির উপজীব্য। মহা শিবরাত্রির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। প্রতিমাসে শিবরাত্রি তিথি থাকলেও, ফাল্গুন কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি মহা শিবরাত্রি নামে পরিচিত। এ সময়ে চার প্রহরে শিবের পুজো করলে দুঃখ, কষ্ট, সংকট দূর হয়।

এই দিন থেকেই শীত শেষ হয় এবং বসন্তের শুরু হয়। শীতের মধ্যে আছে জড়তার সংকেত এবং বসন্তে থাকে আতপ্ত মিলনের উদ্ভাস। দিকে দিকে রঙিন ফুলে ভরে যায় প্রকৃতি, দক্ষিণ সমীরণের উন্মাদনা কাঁপিয়ে দেয় অন্তর। ঠিক এমন এক সন্ধিমুহূর্তের প্রাকৃতিক পরিবেশে আসে শিবরাত্রির বিশেষ তিথি। প্রেম, শক্তি ও ঐক্যের মিলনের দিন এটি। মহাশিবরাত্রি তাই নানা ভাবে ছুঁয়ে যায় ভক্তকে।

শিবরাত্রি হল আসলে শিব চতুর্দশী। শিবরাত্রির আরাধনা করে গোটা দেশ। শিবরাত্রির এই দিনটিতে বহু মানুষ অপেক্ষা করেন ভগবান শিবের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। সারারাত জেগে চলে দেবাদিদেবের আরাধনা। প্রত্যেকবারই শিবরাত্রির দিন-তিথি নিয়ে একটা ধন্দ তৈরি হয়। কেননা, শিবরাত্রির সঙ্গে নিশিপালনের ব্যাপার থাকে। কবে নিশিপালন এটা নিয়েই ধন্দ থাকে। এবারেও তাই ঘটেছে। আগামীকাল অর্থাৎ ১৮ই ফেব্রুয়ারি শনিবার চতুর্দশী পড়ছে, চতুর্দশী শুরু হচ্ছে রাত ৮টে ২ মিনিটে। চতুর্দশী শেষ হচ্ছে পরের দিন অর্থাৎ ১৯শে ফেব্রুয়ারি বৈকাল ৪টে ১৮ মিনিটে।

এদিন ভক্তেরা সাধারণত সারাদিন উপবাস পালন করেন। অনেকেই কোনও মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গে দুধ-জল ঢালেন, ধূপ-দীপ জ্বালেন। অনেকে আবার কোনও মন্দিরেই সমস্ত ব্রত-পর্বটি পালন করেন, প্রহরে প্রহরে বিধিমতো সমস্ত পুজো করেন। প্রতিটি প্রহরই গুরুত্বপূর্ণ। যারা সারা রাত জেগে চারপ্রহরই পুজো করতে পারেন না, তাদের অনেকেই প্রথম প্রহরের পুজোটুকু সেরে ব্রত ভঙ্গ করে নেন। অনেকে আবার সব প্রহরগুলিই নিষ্ঠাভরে পালন করেন। প্রতিটি প্রহরের প্রারম্ভ ও অন্ত সময়টা তাই জানা জরুরি।

প্রথম প্রহরের শিব পুজো:

প্রথম প্রহরের পুজো ১৮ই ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টা ১৩ মিনিট থেকে রাত ৯টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত। এ সময় দুধ দিয়ে শিবের অভিষেক করুন এবং ওম হৃীং ঈশানায় নমঃ মন্ত্র জপ করুন।

দ্বিতীয় প্রহরের শিব পুজো:

রাত ৯টা ২৪ মিনিট থেকে মাঝরাত ১২টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় প্রহরের পুজোর সময়। মহাদেবের পুজোয় ওম হৃীং অঘোরায় নমঃ মন্ত্র জপ করুন। দই দিয়ে শিবের অভিষেক করবেন। এর ফলে সন্তান সুখ লাভ করা যায় এবং দাম্পত্য জীবনে আনন্দের আগমন ঘটে।

তৃতীয় প্রহরের শিব পুজো:

তৃতীয় প্রহরের পুজোর সময় হল মাঝরাত ১২টা ৩৫ মিনিট থেকে ভোররাত ৩টে ৪৬ মিনিটের মধ্যে। তৃতীয় প্রহরে শিবপুজোয় ঘি দিয়ে মহাদেবের অভিষেক করবেন। এ সময়ে ওম হৃীং বামদেবায় নমঃ মন্ত্র জপ করবেন। শাস্ত্র মতে এভাবে তৃতীয় প্রহরের পুজো করলে ধনলক্ষ্মী আকৃষ্ট হন। পাশাপাশি চাকরি ও ব্যবসায় সাফল্য লাভ করা যায়।

চতুর্থ প্রহরের শিব পুজো:

ভোররাত ৩টে ৪৬ মিনিট থেকে সকাল ৬টা ৫৬ মিনিটের মধ্যে হবে মহা শিবরাত্রির চতুর্থ প্রহরের পুজো। এই প্রহরে মধু দিয়ে শিবের অভিষেক করতে ভুলবেন না। ওম হৃীং সদ্যোজাতায় নমঃ মন্ত্র জপ করুন। শেষ প্রহরের পুজোর প্রভাবে শিবভক্তরা অখণ্ড সৌভাগ্যের আশীর্বাদ লাভ করবেন।

শিবলিঙ্গে বেলপাতা নিবেদনের নিয়ম:

বিল্বপত্র বা বেলপাতা ছাড়া দেবাদিদেব মহাদেবের পুজো অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, শিবকে বেলপাতা নিবেদন করলে তিনি প্রসন্ন হন। সব সময় তিনটি পাতা সহ বেলপাতা শিবলিঙ্গে নিবেদন করা উচিত। খেয়াল রাখবেন এতে যেন কোনও দাগ না থাকে। কাটা-ছেঁড়া ও শুকিয়ে যাওয়া বেলপাতা একেবারেই নিবেদন করা ঠিক নয়। শিবলিঙ্গে অর্পণের আগে ভাল করে ধুয়ে বেলপাতার মসৃণ দিকটি অর্পণ করুন। পুজোর সময় বেলপাতা না থাকলে, আগে নিবেদিত পাতা ধুয়ে শিবলিঙ্গে অর্পণ করুন। বেলপাতা কখনও বাসি হয় না। শিবলিঙ্গে ১, ১১ বা ২১ টি বেলপাতা নিবেদন করা শুভ।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.