রাজ্যপাল সি ভি আনন্দের “হাতে খড়ি” অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি

হাতে খড়ি অনুষ্ঠানের পর দিল্লিতে জরুরি তলব রাজ্যপালকে

গতকাল সরস্বতী পুজো উপলক্ষ্যে রাজভবনে “হাতে খড়ি” অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌজন্যের এক অভিনব চিত্র এদিন দেখা গেল রাজভবনে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বাংলা শিখতে অতি উৎসাহী ছিলেন। আর তাই বসন্ত পঞ্চমীর দিন তাঁর হাতেখড়ি হচ্ছে বাংলায়। প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সাথে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত দেখা যেত সবসময়। তাই বাংলার মানুষ এমন দৃশ্য দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন।

তবে এই হাতে খড়ি অনুষ্ঠান নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে শাসক এবং বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। কার্যত ঐতিহাসিক মুহূর্তে সাক্ষী রাখতে চেয়েছিলেন সমস্ত মানুষকেই। যদিও বিষয়টিকে প্রথমদিন থেকেই ভালো ভাবে নেয়নি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। আর শেষ মুহূর্তেও এই অনুষ্ঠান এড়িয়েই গেলেন বিজেপি নেতারা। আসলেন না সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা। তবে রাজ্যপালের হাতে খড়ি অনুষ্ঠানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজ্যপালকে বর্ণ পরিচয় বই উপহার দেন। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের হাতে খড়ি অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না শুভেন্দু অধিকারী, একথা বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেন তিনি। সরস্বতী পুজোর দুপুরে বিরোধী দলনেতা নিজেই ট্যুইট করে সে কথা জানান। কেন তিনি রাজভবনে যাচ্ছেন না, তা জানিয়ে বলেন, “রাজ্যপালকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্য সরকার। টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার ইস্যু চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। শিক্ষা দফতরে দুর্নীতি অভিযোগ নিয়ে যখন চাপান-উতোর চলছে, টাকার বিনিময়ে শিক্ষকের চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে, তখন এই সমস্ত অনুষ্ঠান করে সবার নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।”

আবার দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, “প্রথমেই ভুল মাস্টারের কাছে হাতেখড়ি হলে, ভুলই শিখবেন।” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অনুষ্ঠানের সমালোচনা করলেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আর অনুষ্ঠানকে তীব্র কটাক্ষ করেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

সর্বোপরি রাজ্যপালের বাংলায় হাতে খড়ি ঘিরে প্রবল রাজনৈতিক চাপানউতোর দেখা গেছে দিনকয়েক ধরেই।

গত কয়েকদিন আগেই বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে সি ভি আনন্দ বোসকে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বাংলার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে রীতিমত উচ্ছ্বসিত ছিলেন। এমনকি “চিত্ত যে ভয় শূন্য” পাঠ করে সদ্য রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তিনি বাংলা শিখবেন। আর সেই সরস্বতী পুজোর দিনেই হাতের খড়ির মাধ্যমে বাংলা শেখার সূচনা হয়ে গেল রাজ্যপালের। গুরু হিসাবে বেছে নিলেন তিন খুদেকে। ডক্টরেট উপাধি পাওয়া সি ভি আনন্দ বোস সরস্বতী পুজোয় স্লেট পেন্সিল নিয়ে ‘অ আ ক খ’ লেখা লিখলেন। এদিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বাংলা ভাষা শিক্ষা শুরু। তাঁর হাতেখড়ি হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে। পাল্টা মঞ্চ থেকে মালয়ালম বলে চমক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পুলিশ কমিশনার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অনুষ্ঠানে না গেলেও, উপস্থিত ছিলেন তথাগত রায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন রাজ্যপালকে বাংলা শেখার জন্যে অভিভাদন জানান। এর পাশাপাশি তিনি দুটি বর্ণপরিচয় বই তুলে দেন রাজ্যপালের হাতে। এমনকি বেশ কিছুটা মালায়াম ভাষাতে কথা কথা বলতে শোনা যায় তাঁর মুখ দিয়ে। শুধু তাই নয়, তিনি বলেন,”১৯৪০ সালে গান্ধীজি বাংলা শিখতে শুরু করেছিলেন। গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী আমাদের প্রাক্তন রাজ্যপাল তিনিও বাংলা শিখেছিলেন।” তিনি আরও বলেন, “এশিয়ায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয়। বিশ্বে পঞ্চম। কিন্তু আমরা সব ভাষা শিখতে চাই।”

এই দিন সাংবিধানিক প্রধানের মুখে শোনা যায় “জয় বাংলা” স্লোগান। এরপরেই দিল্লির ডাক চলে এলো। এই নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক তরজা। রাজভবন সূত্রে খবর, দ্রুত দিল্লি যাবেন রাজ্যপাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে ডাক এসেছে।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.