বিবিসি-র দফতরে আয়কর হানা! কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক এই সংবাদ সংস্থার বিরুদ্ধে

বিবিসি-র মুম্বাই, দিল্লি দফতরে রাতভর চলেছে তল্লাশি

গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দিল্লি এবং মুম্বইয়ের ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা বিবিসি-র দফতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। এই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিবিসি-কে বার বার নোটিস দেওয়া হলেও বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আয়কর দফতরকে প্রয়োজনীয় কোনও নথি দেয়নি তারা৷ আরও অভিযোগ, সংস্থার লাভের অঙ্ক কম করে দেখিয়ে অন্যান্য অধীনস্ত সংস্থার খাতে সরিয়ে দিত বিবিসি৷

মঙ্গলবার থেকে বিবিসি-র দফতরে আয়কর আধিকারিকদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দিল্লি ও মুম্বই, ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন দুই দফতরেই আয়করের ‘সমীক্ষা’ চলল রাতভর। জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক স্তরে কর ফাঁকির অভিযোগেই বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের দফতরে হানা দেন আয়কর কর্তারা। যদিও এই ঘটনাকে ‘হানা’ নয়, ‘সমীক্ষা’ বলেই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তবে, এই সমীক্ষা ও হানার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। সমীক্ষা চালানো যাবে কেবলমাত্র অফিস আওয়ার্সেই। অন্যসময় নয়। আর, আয়কর হানা দেওয়া যায় দিনের যে কোনও সময়। আয়কর সমীক্ষায় তদন্তের গণ্ডি কেবলমাত্র কাগজপত্র ও অর্থ সংক্রান্ত কিছু নথি এবং প্রশ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আয়কর হানায় তা নয়। আয়কর হানার সময় সাধারণত ঘটনাস্থলে পুলিশকে রাখতে হয়। আয়কর সমীক্ষায় যা বাধ্যতামূলক নয়।

সূত্রের খবর, বিবিসি-র কর্মী এবং সাংবাদিকদের ল্যাপটপ, মোবাইলও আয়কর দফতরের কর্তারা হেফাজতে নিয়েছেন৷ ২০১২ সাল পর্যন্ত সংস্থার হিসেব নিকেশ খতিয়ে দেখেছেন আয়কর দফতরের আধিকারিকরা৷ আয়কর দফতরের আধিকারিকরা অবশ্য জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় নথি খতিয়ে দেখার কাজ শেষ হলেই সংস্থার কর্মী এবং সাংবাদিকদের ল্যাপটপ, মোবাইল ফিরিয়ে দেওয়া হবে৷ জানা গিয়েছে, বিবিসিকে অতীতেও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা সেই নোটিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করেনি।

মঙ্গলবার সকালে আয়কর দফতর হানা দেওয়ার পর বিবিসি-র পক্ষ থেকে প্রথমে ট্যুইট করে জানানো হয়, তারা আধিকারিকদের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করছেন এবং বিষয়টি দ্রুত মিটে যাবে বলে তারা আশাবাদী৷ যদিও সন্ধের দিকে অবশ্য ফের বিবিসি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেশ কিছু কর্মীকে অফিস ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হলেও কয়েকজনকে থেকে যেতে বলা হয়েছে৷ সংস্থার পক্ষ থেকে কর্মীদেরকে দেওয়া বার্তায় জানানো হয়, যারা অফিসে আসেননি, তারা যেন না আসেন৷ এছাড়াও তল্লাশি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্যও নিজেদের কর্মীদের নির্দেশ দেয় বিবিসি৷

গতকাল সকাল থেকে এই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছিল৷ তারপর গোটা রাত ধরে বিবিসি-র দিল্লি এবং মুম্বইয়ের অফিসে আয়কর দফতরের তল্লাশি জারি থাকল৷

ইতিমধ্যেই বিবিসি-র দফতরে আয়কর হানাকে মোদি সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাবের পরিচয় বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস, শিবসেনার মতো বিরোধী দলগুলি৷ কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাই আইনের ঊর্ধ্বে নয়৷ বিজেপি-র পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছে, বিবিসি ভারত বিরোধী তথ্য প্রচার করছে৷ কংগ্রেস এবং বিবিসি-র নীতি একই বলেও অভিযোগ করা হয়েছে বিজেপি-র পক্ষ থেকে৷ এদিকে, বিবিসি-র কার্যালয়ে আয়কর দফতরের অভিযান নিয়ে সরগরম রাজনৈতিকমহল।

এদিকে বিবিসির অফিসে আয়কর দফতরের হানা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি জারি করেছে সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া। প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার তরফেও এই তল্লাশির ব্যাপারে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। গিল্ডের তরফে বলা হয়েছে, ‘সরকারের সমালোচনা করা সংবাদমাধ্যমগুলিকে ভয় দেখানো এবং হেনস্থা করার জন্য সরকারি সংস্থাগুলিকে ব্যবহারের এই প্রবণতায় আমরা উদ্বিগ্ন।’

প্রসঙ্গত, মাস খানেক আগেই ২০০২ গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা নিয়ে দুই ভাগে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছিল বিবিসি। ভারত সরকার সেই তথ্যচিত্রটিকে ইউটিউব এবং টুইটারে ব্লক করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিতর্কিত তথ্যচিত্র তৈরি করার জন্যই সরকারের রোষে পড়তে হল বিবিসি-কে এমনই দাবি করেছেন বিরোধীরা। এই আবহে বিবিসি-র অফিসে আয়কর দফতরের এই তল্লাশি অভিযান নিয়ে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি।

আমেরিকা জানিয়েছে, বিবিসির মুম্বই এবং দিল্লির দফতরে আয়কর তল্লাশির বিষয়টি তারা জানেন এবং গোটা প্রক্রিয়ার উপরে নজর রাখা হচ্ছে৷ অন্যদিকে ব্রিটেন থেকেই গোটা বিষয়টিতে কড়া নজর রাখছে সেদেশের সরকার। ব্রিটেন সরকার জানিয়েছে গোটা বিষয়টির বিষয়ে ওয়াকিবহাল তারা।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.