প্রতি বছর পালিত হওয়া ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব কী?

স্বাধীনতা দিবসের প্রায় আড়াই বছর পর তৈরি হয়েছিল দেশের সংবিধান

প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি দিনটি ভারতবর্ষের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট ইংরেজ শাসনের থেকে স্বাধীনতা পায় ভারতবর্ষ। কিন্তু সে সময় ভারতের নিজস্ব কোনও স্থায়ী সংবিধান না থাকায় ব্রিটিশ সরকারের ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’-এর সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী স্বাধীন ভারতবর্ষ শাসিত হত।

স্বাধীনতা দিবসের প্রায় আড়াই বছর পর তৈরি হয়েছিল দেশের সংবিধান। ১৯৪৭ সালে ড. বি আর আম্বেডকরের নেতৃত্বে গঠিত হয় খসড়া কমিটি। ১৯৪৭ সালের ৪ঠা নভেম্বর ড: বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বাধীন খসড়া কমিটি প্রথম ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দিয়েছিল। এই কমিটির সদস্যরা ১৯৫০ সালের ২৪শে জানুয়ারি সংবিধানের দু’টি হস্তলিখিত কপিতে সই করেন। এর একটি ছিল ইংরেজিতে ও অন্যটি হিন্দিতে। এর দু’দিন পর ২৬শে জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারতবর্ষ। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ হয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এই সূত্র ধরেই প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস।

২৬শে জানুয়ারিকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আরও একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে লাহোরে জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয়। এই অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। সেখানে ঘোষণা করা হয়, ১৯৩০ সালের ২৬শে জানুয়ারির মধ্যে ব্রিটিশ সরকার যদি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা না দেয়, তাহলে ভারতকে পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণা করা হবে। সেই সময়সীমার মধ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেয়নি। ফলে কংগ্রেস ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ঘোষণা করে সক্রিয় আন্দোলন শুরু করে। ১৯৩০ সালের ২৬শে জানুয়ারির গুরুত্ব বজায় রাখতে, তাই ১৯৫০ সালের এই দিনই ভারতের সংবিধান গৃহীত হয় এবং এই দিনটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

প্রতিটি ভারতবাসীর জন্যই ২৬শে জানুয়ারি দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে কুচকাওয়াজ এবং বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত করা কোনও সহজ কাজ ছিল না। দেশের বীর সন্তান, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ, বলিদানের ফসল হল স্বাধীনতা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি রাজধানীর রাজপথে আট কিলোমিটারের কুচকাওয়াজ শুরু হয় রাইসিনা হিল থেকে। এর পরে রাজপথ, ইন্ডিয়া গেট হয়ে লালকেল্লায় শেষ হয়। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি কুচকাওয়াজ রাজপথের পরিবর্তে তৎকালীন ইর্ভিন স্টেডিয়াম (বর্তমানে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম)-এ আয়োজিত হয়েছিল। তখন ইর্ভিন স্টেডিয়ামের চারদিকে দেওয়াল ছিল না ও সেখান থেকে লালকেল্লা পরিষ্কার দেখা যেত। প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে বিভিন্ন রাজ্যের ট্যাবলো অংশগ্রহণ করে। প্যারেডে অংশগ্রহণ করে ভারতীয় সেনা, নৌ ও বায়ুসেনা। কলকাতার রেড রোডেও চোখে পড়ে সেই একই আড়ম্বর। প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন দেশের রাষ্ট্রপতি। প্রজাতন্ত্র দিবসে বিভিন্ন দেশের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.