তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় দলের তকমা প্রত্যাহার করার দাবী জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী

অবশ্য শুভেন্দুবাবুর এই অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস

হাইলাইটস:

•উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে ভোটের ফলাফলের পর বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবী তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় দলের তকমা প্রত্যাহার করা জরুরি

•এই বিষয়ে তিনি একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে

•বিরোধী দলনেতার আরও দাবি, জাতীয় দলের তকমা পেতে হলে যে শর্তগুলি মানতে হয়, তার কোনওটিই পালন করতে পারেনি বাংলার শাসকদল

কলকাতা: গত বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ে ভোটে লড়েছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল-কংগ্রেস। ত্রিপুরায় একটি আসনেও খাতা খুলতে পারেনি জোড়াফুল শিবির। তবে প্রথম বার মেঘালয়ে লড়ে ৫টি আসনে জিতেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এই দুই রাজ্যে তৃণমূলের ফল তুলে ধরে জাতীয় দলের তকমা নিয়ে সরব হয়েছেন শুভেন্দু। বিজেপি নেতার দাবি, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী কোনও রাজনৈতিক দলকে জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেতে হলে যে সমস্ত শর্ত পূরণ করতে হয়, তৃণমূল কংগ্রেস তা করতে ব্যর্থ। মূলত বলা যায়, জাতীয় দলের তকমা পেতে যে গেলে মাপকাঠি থাকা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে তৃণমূল কিছু জায়গায় পিছিয়ে রয়েছে। আর এই ইস্যুটিকেই জোরাল ভাবে তুলতে চাইছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, জাতীয় দলের শর্ত পূরণে ব্যর্থ তৃণমূল। এই কারণে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে জাতীয় দলের তকমা কেড়ে নেওয়া হোক। এই দাবী জানালেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

জাতীয় দলের তকমা পেতে হলে যে শর্তগুলি মানতে হয়, তার কোনওটিই পালন করতে পারেনি বাংলার শাসকদল। তাই এই মর্মে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভার মোট আসনের ২ শতাংশ দখলে থাকলে জাতীয় দলের স্বীকৃতি মেলে। তবে সেই আসনগুলি ছড়িয়ে থাকতে হবে অন্তত ৩ রাজ্যে। এই যুক্তি দিয়ে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, লোকসভায় তৃণমূলের সাংসদরা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের। অন্য কোনও রাজ্যের নন। ফলে এই শর্ত এ ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি। জাতীয় দলের স্বীকৃতি ধরে রাখতে গেলে ৪ বা তার বেশি রাজ্যে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে কোনও দলের প্রার্থীদের অন্তত ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। এই নিয়ম অনুযায়ীও তৃণমূল শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন শুভেন্দুবাবু। তাই জাতীয় দলের তকমা কেড়ে নেওয়া হোক তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে, বলে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনকী এই মর্মে ট্যুইটও করেন বিরোধী দলনেতা।

ট্যুইটারে জাতীয় দল হওয়ার নিয়মাবলী তুলে ধরে যথেষ্ট যুক্তিও দেখিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। এদিনের ট্যুইটে গোয়া এবং উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মোট প্রাপ্ত ভোটের হিসেবও উল্লেখ করেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি লেখেন, ‘তৃণমূল সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আঞ্চলিক দল।’ ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের ফলাফল সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুভেন্দু অধিকারী গত বৃহস্পতিবার ট্যুইট করে কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, ‘ত্রিপুরেশ্বরীর আশীর্বাদে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে ‘নোটা’র কাছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হল সর্বভারতীয় তোলামুল পার্টি।’ শুভেন্দুর ট্যুইটের পরপরই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ভোটের ফলাফলের নিয়ে রাজ্যে শাসকদলকে নিশানা করে ট্যুইট করেন।

এই প্রসঙ্গে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল। তবে নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় শর্তপূরণের পরই তৃণমূল জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেয়েছে বলে দাবি করেছেন, দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার মাটিতে আগামী দিনে আরও শক্তিশালী হবে তৃণমূল। সেই সঙ্গে গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং অসমেও আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠবে ঘাসফুল শিবির। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, শুভেন্দু অধিকারী মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই টার্গেট করতে চান। যেহেতু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাই তৃণমূল কংগ্রেস যদি সর্ব ভারতীয় তকমা হারায়, তাহলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদের কোনও মান্যতাই থাকে না।

মুকুল রায় তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর মনিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ত্রিপুরায় পার্টি সংগঠন বিস্তার করে এবং বিধায়কও হন। এক সময় পঞ্জাবেও ভোটে করেছিল তৃণমূল। পরবর্তী সময়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালে দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর নয়া পর্যায়ে বাইরের রাজ্যে ভোটে লড়াই এবং সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু হয়। সাম্প্রতিক তৃণমূলের যা প্রাপ্ত ভোট তা নির্বাচন কমিশনের ধার্য মাপকাঠি থেকে কম। আর এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার বানাতে চাইছে বিজেপি। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সিপিআই কিংবা এনসিপি-র মতো দলের নাম এখনও জাতীয় দলের তালিকায় রয়েছে। চার রাজ্যে ৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার যে মাপকাঠি, তা সিপিআই কিংবা এনসিপি-র ক্ষেত্রেও পূরণ হয়নি। তারপরও তারা জাতীয় দলের তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এইরকম রাজনৈতিক বিষয়ক আপডেট পেতে ওয়ান ওয়ার্ল্ড নিউজ বাংলার সাথে যুক্ত থাকুন।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.