চোখ রাঙাচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস, বিপদের মুখে আপনার বাড়ির বাচ্চারা! কলকাতা পুরসভার তরফে জারি করা হয়েছে বিশেষ নির্দেশিকা

নয়া আতঙ্কের নাম অ্যাডিনো ভাইরাস

করোনা মহামারীর পর থেকেই আমরা ভাইরাসের নাম শুনলেই ভয় পেয়ে যাই। এবার পশ্চিমবঙ্গে নয়া ভাইরাস চোখ রাঙাচ্ছে, যার নাম অ্যাডিনো ভাইরাস। এর ফলে বিপদের মুখে রাজ্যের শিশুরা। অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে সমগ্র রাজ্যজুড়ে। উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, নাইসেড-এর রিপোর্ট। যেখানে বলা হয়েছে, গত দেড়মাসে স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো ৫০০-রও বেশি নমুনার মধ্যে ৩২ শতাংশই অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার এক অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে পার্ক সার্কাসের ICH-এ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে কয়েকদিন ধরে ওই শিশু ভর্তি ছিল আইসিইউ-তে। এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৩ অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর। বিশেষ করে দু’বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে।

অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রমণের উপসর্গগুলি জেনে নিন: 

•গলা ব্যথা, জ্বর থেকে সর্দি, কাশি অ্যাডিনোভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ।

•এছাড়াও, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, নিউমোনিয়াও দেখা দিতে পারে।

•কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া ও পেট জ্বালার মতো উপসর্গও দেখা দেয়।

•এর পাশাপাশি মাথা ব্যথা, বমির মতো গুরুতর লক্ষণও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়।

কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?

•সংক্রমক ভাইরাসটি অন্যের হাঁচি, কাশি থেকেই ছড়ায়।

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি।

•বাতাসে হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসও সরাসরি আক্রমণ করেতে পারে ফুসফুসকে।

•এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে শিশুর ডায়াপার থেকেও ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।

অ্যাাডিনো সংক্রমণ মোকাবিলায় নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। গাইডলাইনে বলা হয়েছে:

•শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্বস্তি থাকলে নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।

•খাওয়াদাওয়া বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলেও যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে।

•জ্বর-সর্দি থাকলে, শিশুদের স্কুলে না পাঠানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায়।

•৩ থেকে ৫ দিন টানা জ্বর থাকলে বা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯২ শতাংশের কম থাকলে শিশুদের ভর্তি করতে হবে হাসপাতালে।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে আরও জানানো হয়েছে যে, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে- হাসপাতালে প্রতিদিন কত শিশু আসছে, তাদের কতজনকে ভর্তি করতে হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। হাসপাতালে শিশুদের ভর্তি করার পর কী ওষুধ দিতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে কী পরিমাণ ওষুধ দিতে হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশিকায়। জেলার শিশু হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর পরিকাঠামো যেন ঠিক ঠাক থাকে, তাও দেখতে বলা হয়েছে।

আবার অন্যদিকে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে কলকাতা পৌরসভা:

অ্যাডিনোভাইরাস নিয়ে বিশেষ বৈঠক হয়েছে কলকাতা পৌরসভায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। বৈঠকের পর তিনি জানান, কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে করবেন কোনও বাচ্চার জ্বর-সর্দি-কাশি হয়েছে কী না। তিনি আরও জানান, কলকাতার পৌরসভার তরফেও বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন যেটুকু তথ্য কলকাতা পৌরসভার কাছে রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এস এম সি ইউ প্রায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে। পৌরসভার তরফে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বর্তমানে কলকাতার বেশিরভাগ হাসপাতালে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন শিশুরা। বিশেষ করে দুবছর থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত বেশি হয়েছে। যেহেতু এই বয়সের শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যায় না, তাই কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্য চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে কোনও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। যাদের সমস্যা বেশি রয়েছে, তাদের যত শীঘ্র সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.