আপনার বাচ্চার স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর টিপসগুলি জেনে নিন

বাচ্চার স্মৃতিশক্তি বাড়ানো ভীষণই দরকার
স্মৃতিশক্তির মূলে জিনের বড়ো ভূমিকা থাকলেও মানুষের হাতেও কিছু আছে। কিছু খেলা আছে, কিছু খাবার আছে, জীবনযাপনের কিছু নিয়ম আছে যা একদম ছোট থেকে মেনে চললে শুধু স্মৃতিশক্তি নয়, বুদ্ধিও বাড়ে আপনার বাচ্চার। এর ফলে তাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো হয়, আত্মবিশ্বাস এবং স্মার্টনেসও বাড়ে। খেলাধুলার কারণে বুদ্ধি ও স্মৃতি বাড়ানোর চেয়ে ভালো বিষয় আর কিছুই নেই। ফলে আপনার বাচ্চার স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর সঠিক উপায়গুলি জেনে নিন:
বাচ্চাকে কোনও ব্যাপারে বেশি চাপ দেবেন না: আপনার বাচ্চাকে কোনোরকম প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দেবেন না। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার চাপ তাকে দেবেন না। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করবেন না, যাতে সে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করে। কারণ তাতে ব্রেনের ক্ষতি হয়। প্রতিটি বাচ্চা তার নিজের মতো করে শিখতে ভালোবাসে, সে সুযোগ তাকে দিন। সে কী পড়ছে, কেন পড়ছে যাতে সেগুলি বুঝতে পারে সেরকম পরিবেশ তৈরি করুন। তাহলে আর মুখস্থ করে পড়া মনে রাখতে হবে না, এমনিই মনে থেকে যাবে। ফলে তার স্মৃতিশক্তির সাথে সাথে চিন্তাশক্তিও বৃদ্ধি পাবে।
মেমরি গেম: সময়েরও একটা ভূমিকা আছে। যত বেশি সময় এতে মগ্ন থাকা যায়, তত বেশি মঙ্গল। তবে খাওয়া-দাওয়া এবং শারীরিক করসত ভুলে দিবারাত্রি এতে মগ্ন থাকলেও আবার বিপদ ঘটতে পারে। কারণ স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ব্যাপারে সঠিক খাবার খাওয়া ও ব্যায়ামেরও ভূমিকা আছে।
সঠিক খাবার খাওয়ান: সুষম খাবার পেট ভরে খাওয়ানোর পাশাপাশি কয়েকটি বিশেষ খাবারও খাওয়ান। যেমন –
•বাচ্চাদের কাছে সবুজ শাক সবচেয়ে অপছন্দের খাবার, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সবুজ শাক খাওয়ানো ছাড়াও কোনো উপায় নেই। ব্রেন ও শরীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে শাক খাওয়াতেই হবে। বিশেষ করে পালং শাক, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, সর্ষে শাক, লেটুস শাক, বীট শাক ইত্যাদি। ভিটামিন A, B, C, E এবং K ইত্যাদির গুনে ব্রেনের বৃদ্ধি ভালো হয়। আর এইসব ভিটামিন থাকে শাকের ভিতর। ফলে ভালো থাকবে সাধারণ স্বাস্থ্যও।
•আপনার বাচ্চার শরীরে এনার্জি এবং পুষ্টি জোগাতে প্রতিদিন কোনো না কোনো বাদাম ও বীজ খাওয়ান। যেমন – আখরোট, আমন্ড, কাজু, পেস্তা এবং বীজের মধ্যে চিয়া, কুমড়ো, সূর্যমুখী এবং তিসির বীজ বা তিল। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও নানা রকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের যোগানে বাচ্চার স্মৃতিশক্তি যেমন বাড়বে তেমন বাড়বে চিন্তাভাবনার দক্ষতা।
•অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিভিন্ন খনিজ, ফাইবারের গুনে সমৃদ্ধ হবে শরীর। প্রতিদিন নিয়ম করে পালক পনির, সর্ষে শাক ভাজা, পুদিনার সরবত, লেটুসের স্যালাড, ধনেপাতার চাটনি ইত্যাদির মধ্যে কোনো একটি খাবার আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান। বিভিন্ন রান্নায় ধনেপাতা মেশান।
•বাচ্চাকে প্রসেস করা বাজারি খাবার বেশি না খাওয়ানোই উত্তম। কারণ এতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খারাপ তেমনই খারাপ ব্রেনের এবং বুদ্ধি ও স্মৃতির জন্যও।
•ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও DHA নামে উপকারি ফ্যাটের যোগান পেতে আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান প্রতিদিন একটি করে গোটা ডিম। ব্রেন ও স্নায়ুর কোষের গঠনে এদের বিশেষ ভূমিকা আছে। স্মৃতিশক্তি ও কোনো কিছু শেখার দক্ষতা বাড়াতে মাছও খাওয়ান নিয়মিত।
ব্যায়ামের ও খেলাধুলা: আপনার বাচ্চা যত বেশি দৌঁড়ঝাপ করবে তার শরীরে ও ব্রেনে রক্ত সঞ্চালন ততো ভালো হবে এবং সে সুস্থ থাকবে ততো বেশি। এ কথা আজ প্রমাণিত যে, স্মৃতি বাড়াতে এবং বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে ব্যায়াম ও ধ্যানের কোনো তুলনা নেই। তাই আমাদের পরামর্শ নিন যে, ছোট থেকেই সন্তানকে বিভিন্ন খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত করে দিন। সবসময় প্রতিযোগিতামূলক খেলা নয়, মনের আনন্দে খেলতে দিন, যাতে তাদের মানসিক চাপ কম থাকে। মানসিক চাপ কম থাকলে ব্রেনের বিকাশ ভালো হয়।
ভালো করে ঘুমোতে দিন: আপনার বাচ্চার স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার জন্য এবং তাকে উন্নত করার জন্য দিনে ৮-১০ ঘণ্টা সঠিক রুটিন অনুযায়ী ঘুম জরুরি। ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার নির্দিষ্ট সময় যেন থাকে এবং এমনভাবে তা স্থির করতে হবে যাতে স্কুলে পড়তে যাওয়ার আগে ব্রেন একদম তরতাজা থাকে। ছোট বাচ্চাদের দুপুরেও অল্প ঘুমের প্রয়োজন। কারণ বিভিন্ন গবেষণাতে দেখা গেছে যে, দুপুরে যে সমস্ত বাচ্চারা ঘুমায় তাদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের চেয়ে বেশি কিছুটা উন্নত।