মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝে এখন পাখির চোখ মেঘালয়ের বিধানসভা নির্বাচন

আজ মেঘালয়ে নির্বাচনী সভা মমতা – অভিষেকের

এই বছর ফেব্রুয়ারিতেই মেঘালয়ের বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নজরে এখন মেঘালয়। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে অনেকদিন থেকেই ঘাঁটি মজবুত করতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের ১১ জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগদান করায় এখন মেঘালয় বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল তৃণমূলই। সূত্রের খবর অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন আগামীকাল মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং নাগাল্যান্ডে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে পারে। তৃণমূল এবার ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ে ভোট প্রার্থী দেবে। এর আগে মেঘালয়ের বিধানসভার ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে লড়তে দেখা যায়নি। তবে এবার তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ৫২টি আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সম্প্রতি বলেছেন, ‘বাংলার পর মেঘালয় হতে চলেছে দ্বিতীয় রাজ্য, যেখানে তৃণমূল সরকার গড়বে।’

আজ থেকেই রাজনৈতিক সভা শুরু হয়ে যাচ্ছে মেঘালয়ে৷ তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় দু’জনেই এই সভা করবেন। তৃণমূল কংগ্রেস আশাবাদী, এই সভা থেকে তারা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছে দিতে পারবেন। একই সঙ্গে বিধানসভা ভোটে মেঘালয়ে তৃণমূল ভালো ফল করবে। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমার হাত ধরে বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়াও রয়েছে রাজ্যে। আর সেই আবহেই বাংলার বাইরে এই রাজ্যেও সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল।

গত ডিসেম্বরেই মেঘালয় সফর করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলংয়ে কর্মীসভায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন মেঘালয় যদি তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে তাহলে সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা। এছাড়াও সে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বাংলার মতো লক্ষ্মীর ভান্ডার চালু করার কথাও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তৃণমূল এই রাজ্যে আসন পাওয়া নিয়ে অন্য রাজ্যের চেয়ে একটু বেশি আশাবাদী। এনপিপি নেতাদের গড়েই আপাতত জোড়া ফুল ফোটাতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাই এই জনসভা রাজনৈতিক দিক থেকেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সূত্রের খবর, আজ আরও ৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেবে জোড়া ফুল শিবির৷ সবমিলিয়ে নির্বাচন ঘোষণার আগেই ৫৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিচ্ছে বাংলার শাসক দল।

তিন দিনের সফরে মঙ্গলবারই উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সফরের মাঝেই আজ দুপুরে মেঘালয়ে জনসভা করবেন তিনি। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বাংলার বাইরেও এবার সরকার গঠন করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। আর তাই ভোটের দিন ঘোষণার আগেই মেঘালয় নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে তৃণমূল।

আজকের সভার জন্য মেঘালয়ের উত্তর গারো পাহাড়কে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই গারো পাহাড়ের মেন্দিপাথারেই প্রথম নির্বাচনী সভা থেকে কার্যত ভোট প্রচারের ঝড় তুলতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ মেঘালয়ের এই অংশে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক দক্ষতা অনেক বেশি৷ দ্বিতীয়ত, যেখানে সভা হবে তার কাছাকাছি স্থান তুরা শহর৷ ঘনবসতিপূর্ণ তুরাতেই এদিন জনসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয়ের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমা দুজনেই এই তুরা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দুই বিধানসভার বিধায়ক। এই অঞ্চলে আগেও সভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মেঘালয়ের রাজনীতিতে তুরা লোকসভা কেন্দ্রের গুরুত্ব অপরিসীম। পূর্ণ সাংমা পরিবারের খাস তালুক তুরা থেকেই ঘুঁটি সাজাতে চাইছেন মমতা ও অভিষেক। এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ২৪টি বিধানসভা কেন্দ্র। এদিনের জনসভায় মমতা ও অভিষেক ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন মেঘালয়ের তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি চার্লস পাইনগ্রোপে, বিধানসভার দলনেতা মুকুল সাংমা এবং মেঘালয়ের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক মানস ভুঁইয়া।

আজ মেঘালয়ের সভা শেষ করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টারে করে ফিরবেন আলিপুর জেলায়। আগামীকাল আলিপুরের সুভাষিনী গ্রাউন্ডে প্রশাসনিক সভা করার কথা রয়েছে তাঁর। আলিপুর, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি এই তিন জেলা নিয়ে প্রশাসনিক সভা করবেন তিনি। এরপর ওই তিন জেলাতেই কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। প্রশাসনিক সভা শেষ করে তিনি পৌঁছোবেন দুয়ারে সরকারের কর্মসূচিতে। সেখানে উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেবেন দুয়ারে সরকারের সুবিধা। এইসব কর্মসূচি শেষ করে হাসিমারা এয়ারফোর্স স্টেশন থেকে বিমানে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.