“দিদির সুরক্ষা কবচ” কর্মসূচি নিয়ে গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন দিদির দূতরা

গত ২ই জানুয়ারি নজরুল মঞ্চে “দিদির সুরক্ষা কবচ” কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দিন মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দিদির দূত হিসাবে কাজ করবেন প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ ভলান্টিয়ার। তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবেন। প্রথম পর্যায়ে, প্রত্যেক সাংসদ, বিধায়ক, সভাধিপতি, জেলা প্রেসিডেন্ট, জেলা চেয়ারম্যান, দলীয় মুখপাত্ররা ৩২০ জনের টিম তৈরি হয়েছে। ১১ই জানুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১০ জন করে সদস্য গ্রামে থাকবেন তারা। বাংলায় সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৩৪৩ অঞ্চল রয়েছে। ১ জন ১০টা অঞ্চলে রাতে থাকেন, তবে ৩২০ জনের হিসাবে ৩ হাজার ২০০ অঞ্চলে রাত কাটানো যাবে। তাহলে ৯৮ শতাংশ অঞ্চলই ঘোরা হবে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথামতো গত ১১ই জানুয়ারি থেকে “দিদির সুরক্ষা কবচ” কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। এই কর্মসূচি শুরু হতে না হতেই অভিযোগের পাহাড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজ্যের ৪৪টি জায়গায় পালিত হয়েছিল। এই কর্মসূচি পালন করতে প্রতিটা গ্রামে পৌঁছেছেন ‘দিদির দূত’ হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সংসদ-জেলা সভাপতি-জেলা পরিষদের সভাধিপতিরা। এই কর্মসূচির সাহায্যে রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। তবে কর্মসূচির প্রথম দিন থেকেই ‘দিদির দূত’ হিসাবে বেরিয়ে জেলায় জেলায় স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তৃণমূলের নেতা – মন্ত্রী – সাংসদদের। মুর্শিদাবাদের শ্রীহট্টি গ্রামে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পর এবার শতাব্দী রায়, বীরভূমে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে গিয়ে এ বার বিক্ষোভের মুখে পড়লেন তিনি।

নির্ধারিত কর্মসূচি মেনে শুক্রবার বীরভূমেরই হাসন বিধানসভার মেলেরডাঙা গ্রামে যান শতাব্দী। সেখানে বীরভূমের সাংসদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। তাদের দাবি, দিনের পর দিন কেটে গেলেও রাস্তা তৈরি হয়নি। এমনকি একাধিকবার রাস্তা তৈরির প্রতিশ্রুতির দেওয়া হলেও তা হয়নি বলে অভিযোগ। এছাড়াও আবাস যোজনায় বাড়ি, বার্ধক্যভাতা না-পাওয়া নিয়ে একাধিক ইস্যুতে এদিন সাংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের মানুষ। যা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। অস্বস্তিতে পড়ে যান সাংসদ। পরে শতাব্দী বলেন, মানুষের অভাব অভিযোগ শুনেছি। শীঘ্রই সেই মতো কাজ হবে।

অন্যদিকে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নিয়ে প্রচারে গিয়ে গ্রামের মহিলাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন অভিনেত্রী তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদিকা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বাঁকুড়া-২ ব্লকের জুনবেদিয়ার বাগদী পাড়ার ঘটনা। সায়ন্তিকাকে হাতের কাছে পেয়ে এলাকার মহিলারা নিজেদের ক্ষোভ উগরে দেন।

কার্যত একই অবস্থা দলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের। গতকাল বালিজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুখুটিয়া গ্রামে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন দেবাংশু। গ্রামবাসীদের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না এলাকায়। আবাস যোজনার উপভোক্তাদের তালিকায় নাম না-থাকা নিয়েও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেবাংশুও ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে গ্রামেই ঢুকতে পারেননি যুব নেতা।

এছাড়াও ডায়মন্ডহারবার, পুরুলিয়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একই ভাবে তৃণমূল নেতারা গ্রামের মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে পড়ছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে তৃণমূল নেতাদের বিক্ষোভের মুখে পড়া নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না রাজ্যের বিরোধী নেতারা।

Sanjana Chakraborty

Professional Content Writer

Leave a Reply

Your email address will not be published.